বাংলাদেশের দায়দেনা নিয়ে কেন চিন্তিত হবো
সাম্প্র্রতিক সময়ে সরকারি দায়দেনা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় বৈদেশিক দায়দেনা পরিস্থিতির জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এ আলোচনা জোরালো হয়েছে। শুধু শ্রীলঙ্কাতে নয়; এরূপ আর্থিক সংকট ঘানা, জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান এমনকি নেপালেও চলছে। এসব দেশে দায়দেনা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক সংকট এখন রাজনৈতিক সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশে দায়দেনা এখনও স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকলেও নিকট আগামীতে এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার মতো বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
সব দেশের সরকারি দায়দেনা পরিস্থিতি জটিল হওয়ার সাধারণত তিনটি কারণ দেখা যায়। প্রথমত, যথেষ্ট পরিমাণে অভ্যন্তরীণ সম্পদ না থাকলে অর্থাৎ কর আহরণ ব্যবস্থা খুব দুর্বল থাকলে সরকার প্রয়োজনীয় পরিমাণে ব্যয় করতে পারে না। ফলে উন্নয়ন ব্যয় মেটাতে বড় ধরনের ঘাটতি থেকে যায়। দ্বিতীয়ত, বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে যদি দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। যেমন রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাস এবং বিদেশে থাকা দেশের সম্পদ থেকে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়া। তৃতীয়ত, সাশ্রয়ী উৎসের বদলে অনেক বেশি ব্যয়বহুল উৎস থেকে ঋণ নিলে দায়দেনা পরিস্থিতি জটিল হয়। এসব কারণে নিজস্ব মুদ্রার বিনিময় হারের পতন ঘটে। জাতীয় মুদ্রার মূল্যমান কমে যেতে থাকলে সরকারি ঋণ পরিশোধে আরও বেশি নিজস্ব মুদ্রা ব্যয় হয়। অপরদিকে দায়দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রবৃদ্ধির হার কমে যায়। মূল্যস্ম্ফীতি বেড়ে যায় ও বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমতে থাকে। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এবং ক্রেডিট রেটিংও কমে যায়। শ্রীলঙ্কাতে সাম্প্র্রতিককালে তাই ঘটেছিল।
সরকার যখন দায়দেনা মেটাতে পারে না অথবা সুদ-আসল মেটানোর জন্য আবার ঋণ নিতে হয়, তখন সেই দায়দেনা টেকসই নয় বলে প্রতিভাত হয়। অনেক ক্ষেত্রে বলা হয়, মোট দেশজ আয়ের (জিডিপির) নির্দিষ্ট শতাংশের ওপর হলে দায়দেনা পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক বা এর নিচে থাকলে খুব ভালো। অর্থনীতি শাস্ত্রে এই শতাংশের হিসাব খুব যৌক্তিকভাবে স্থাপন করা যায়নি। যেমন জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের দায়দেনা তাদের জিডিপির যথাক্রমে ২৬৬ শতাংশ এবং ১২৫ শতাংশের ওপরে। কিন্তু এ দুই দেশ কোনো সময়ে খেলাপি হয়নি। আবার এমনও দেখা গেছে, অনেক দেশের দায়দেনা দেশজ আয়ের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ, কিন্তু তাদের কেউ কেউ অভ্যন্তরীণ বা অন্য উৎস থেকে দায়দেনা মেটানোর জন্য অর্থ জোগাড় করতে পারেনি। সাধারণভাবে অর্থনীতি শাস্ত্রে ঐকমত্য আছে- 'ফিসক্যাল কনসোলিডেশন' অর্থাৎ আর্থিক খাতকে সংহতকরণের ভিত্তিতে সরকারি দায়দেনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। আর্থিক খাত সংহতকরণ করার মানে হলো, সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কর আহরণ বাড়ানো। উপরন্তু বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং আর্থিক পরিণামদর্শিতার ভিত্তিতে তার অর্থায়ন করতে হবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- আর্থিক সংকট
- ধারদেনা