আহমদ ছফার যুগ
আমাদের যুগ আহমদ ছফার যুগ। এই কথা শুনিয়া মোটেও আঁতকাইয়া উঠিবার দরকার নাই। আমি বলিতেছি আমাদের সাহিত্যের কথা। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পাইবার কিছুদিন আগে মহাত্মা আহমদ ছফা ইংরেজি ভাষায় ‘বাংলার সাহিত্যাদর্শ’ নামে একটি নিবন্ধ লিখিয়াছিলেন। পরে ইহার একটি বাংলা তর্জমাও তিনি পেশ করিয়াছিলেন। সেই নিবন্ধে তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম যথাক্রমে এই চারি মহাজনের নাম লইয়াছিলেন। বলিয়াছিলেন ইঁহারাই তাঁহার বিচারে বাংলার সাহিত্যাদর্শ। তিনি সরবে না বলিলেও আমরা ধরিয়া লইয়াছিলাম তাঁহার বিচারের চৌহদ্দি একান্ত ব্রিটিশ শাসনের যুগেই আবদ্ধ ছিল।
সংগত কারণেই আমরা জিজ্ঞাসা করিতে পারি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর নজরুল ইসলামের যুগ শেষ হইবার মানে ব্রিটিশ শাসন উঠিয়া যাইবার (খাসবিচারে ইংরেজি ১৯৪১-৪২ সালের) পরে কি আমাদের মধ্যে আর কোনো সাহিত্যাদর্শ জন্মায় নাই? এই সওয়ালের দুইটি জওয়াব হইতে পারে। হইতে পারে তুলনীয় কোনো সাহিত্যাদর্শ ইঁহাদের পরে আর সত্য সত্যই জন্মায় নাই। আবার এমনও হইতে পারে যে জন্মাইয়াছে কিন্তু আহমদ ছফা দেখিতে পান নাই। আপনাদের কাহারও কাহারও মনে পড়িতে পারে এমন একটা যুগও গিয়াছে আমাদের দেশে ‘রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত’ জয়ন্তী পালিত হইত। সকলেই পালন করিতেন এমন নয়, কমিউনিস্ট পার্টির সহযাত্রী কোনো কোনো সংঘ-সংগঠন এই মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলেন।