...স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই হিরো আলম

প্রথম আলো সারফুদ্দিন আহমেদ প্রকাশিত: ২৮ জুলাই ২০২২, ২০:৪১

বটতলার বাবুরা গুপী গাইনের গান শুনে খুব ‘সুখ্খ্যাত’ করলেন। তাঁদের উৎসাহ পেয়ে গুপী রাজাকে গান শোনাতে গেল। সূর্য ওঠার আগে রাজার শোবার ঘরের পাশের পাচিল ঘেঁষে আয়েশ করে বসে গুপী গান ধরল, ‘দ্যাখো রে নয়ন মেলে...’। রাজা অতি বিরক্ত হয়ে চোখ রগড়াতে রগড়াতে বললেন, ‘ধরে আনতো ব্যাটাকে!’
রাজার তলব পেয়ে গুপী এল।
—নাম কী?
—আজ্ঞে, আমার নাম গুপী গাইন।
—চেঁচাইছিলি কেনে?
—আমি তো চেঁচাইনি রাজামশাই, গান গাইছিলাম। ভৈরবী রাগিণী।
রাজা ভ্রু কুঁচকে বললেন:
—গান গাইছিলি! তা, সাত সুর জানা আছে? মানে সা রে গা মা. ..
—আজ্ঞে জানি।
—তৃতীয় সুর কী?
গুপী আঙুলের কর গুনে বলল, ‘গা’।
রাজা বললেন, ‘উত্তর সঠিক হয়েছে। এবার বল, ষষ্ঠ সুর কোনটা?’
গুপী আবার আঙুলের কর গুনে বলল, ‘ধা’।
রাজা বললেন, ‘এবার দুটো মিলে কী হয়?’
গুপী বলল, ‘গা আর ধা মিলে হয় “গাধা”’
রাজা বললেন, ‘ওরে কে আছিস, এই গাধাটাকে এখনই গাধার পিঠে চড়িয়ে গাঁয়ের বাইরে বের করে দিয়ে আয়।’


উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর সেই গুপীর দশায় পড়েছেন হিরো আলম। ইউটিউব, ফেসবুকের ‘বটতলার বাবুরা’ লাইক, কমেন্ট, শেয়ারের মাধ্যমে তাঁকে বেশুমার ‘সুখ্খ্যাত’ করেছেন। কিন্তু রাজরাজড়াদের কানে সেই গান যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ডিবি কার্যালয়ে তাঁকে তলব করা হয়েছে। সেখানে তাঁর কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।


ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, ‘অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি’ হিরো আলমের নামে নালিশ করে বলেছেন—হিরো আলম ফেসবুক, ইউটিউবে যেসব করে বেড়াচ্ছেন, তা মানার মতো না। তিনি রবীন্দ্রসংগীতকে বিকৃত করে গেয়েছেন। কনস্টেবলের পোশাক পরে ডিআইজির চরিত্রে অভিনয় করেছেন। হারুণ অর রশিদ বলেছেন, ‘এগুলো (হিরো আলমের গান) এ দেশের কৃষ্টি–সংস্কৃতির সঙ্গে মিলে না এবং বিকৃত।’ হিরো আলম পুলিশের পোশাক পরে যে অভিনয় করেছেন, তাকে নিয়মে লঙ্ঘন দাবি করে হারুণ বলেছেন, ‘পুলিশের পোশাক পরে অভিনয় করতে হলে অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। হিরো আলম সেটা নেন না। এসব বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল মেসেজ যায়।’


দীর্ঘ সময় ডিবি অফিসে জেরা শেষে হিরো আলম সেখান থেকে বেরিয়ে এসে বলেছেন, ‘আর কোনো দিন নজরুলগীতি ও রবীন্দ্রসংগীত গাব না।’


নেটাগরিকদের কেউ এটিকে ‘সামান্য ঘটনা’ হিসেবে দেখছেন। কেউ বলছেন, উঁহু, এটা মোটেও সামান্য ঘটনা নয়; এর একটি সমাজতাত্ত্বিক তাৎপর্য আছে।


ফেসবুকারদের একটি বড় অংশ তাঁর ‘রবীন্দ্র-অবমাননা’কে সাংস্কৃতিক দূষণ ও নব্য প্রজন্মের অধঃপতন হিসেবে দেখছেন। আবার কেউ বলছেন, হিরো আলম প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মূর্ত রূপ। কেউ কেউ তাঁকে অলটারনেটিভ সংস্কৃতির অগ্রদূত বলতেও ছাড়ছেন না। কেউ বলছেন, সমাজে যে ‘অপরিবর্তনযোগ্য’ রবীন্দ্র-ন্যাকামি আছে, তার ওপর হিরো আলম এক সুবিশাল সাবভার্সনের মতো থাপ্পড় মেরেছেন।


অর্থাৎ হিরো আলমের জন্য গালমন্দ ও পিঠ-চাপড়ানি—দুই-ই আছে। তাঁর একদিকে অঢেল নিন্দুক এবং আরেক দিকে বিস্তর অনুগামী। হিরো আলম আসলেই রবীন্দ্রসংগীতের ‘অবমাননা’ করে রাবীন্দ্রিক লোকজনের ‘সাংগীতিক অনুভূতিতে’ আঘাত করেছেন কি না, তা এক বিরাট গবেষণার বিষয় হতে পারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও