একজন দ্রৌপদী মুর্মু আর আনন্দিত প্রিসিলা-সুচিত্রা মুর্মুর গল্প

প্রথম আলো ভারত সঞ্জীব দ্রং প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২২, ২২:৫২

দ্রৌপদী মুর্মুর জীবনটা গল্পেরই মতো, যাঁর জন্মভূমির গ্রামে গত জুন মাসেও বিদ্যুতের আলো ছিল না। এত দিনে গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে কি না, বলতে পারব না। ২৭ জুন নিউ দিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ই-বাংলা সংখ্যায় প্রতিবেদনটি দেখলাম। পত্রিকাটি লিখেছে, বিদ্যুৎ নেই রাষ্ট্রপতি প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মূর গ্রামে। রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর খবর হতেই গ্রামে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আলো আনার নির্দেশ এল। তার আগে মুঠোফোনে চার্জ দিতেও গ্রামের বাসিন্দাদের পাশের গ্রামে যেতে হতো। ওডিশার উপারবেদা গ্রামের বাসিন্দারা অন্ধকারেই ছিলেন। কেরোসিন ছিল একমাত্র ভরসা। গ্রামের মেয়ে রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন শুনে তড়িঘড়ি করে বিদ্যুৎ আনার ব্যবস্থা করল রাজ্য সরকার।


জানা গেছে, টাটা পাওয়ার নর্থ ওডিশা ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের (টিপিএলওডিএল) কর্মীরা গ্রামে বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ৩৮টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ৯০০ মিটার তার, ট্রান্সফরমার মেশিনসহ এদিন সকালে গ্রামে পৌঁছেছেন। ওডিশার ময়ূরভঞ্জ জেলার একটি প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামে এভাবেই ছোট ছোট পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে। দ্রৌপদী মুর্মু প্রথম জনজাতি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন ২৫ জুলাই।


এদিকে আমাদের দেশে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে ফিলিমন বাস্কে ফোনে জানিয়েছেন, গত ২৩ জুলাই তাঁরা ঢোল-মাদল-বাদ্য বাজিয়ে, নেচে, গেয়ে আনন্দমিছিল করেছেন শহরে। এই গরমেও গাইবান্ধা শহরের রাস্তায় হাসিখুশি নারী-পুরুষেরা মিলে বের করেছেন বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক র‍্যালি। কারণ কী? তাঁদের সাঁওতাল জাতির একজন দ্রৌপদী মুর্মু ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। কত দূরে ওডিশার ময়ূরভঞ্জ জেলা। তারপর উপারবেদা গ্রাম। ভৌগোলিক দূরত্ব শত শত মাইল হলেও জাতিগত ও সংস্কৃতিগত টান যেন অন্য রকম। তাই গোবিন্দগঞ্জের জয়পুর গ্রামের সাঁওতাল নারী প্রিসিলা মুর্মু, সুচিত্রা মুর্মু, সুফল হেমব্রম আর আন্দ্রিয়াস মুর্মুরা এই আনন্দে তাৎক্ষণিক গান বেঁধেছেন, সুর দিয়েছেন, গেয়েছেন। সাঁওতালি ভাষার গানের অর্থ এ রকম—ভারত এত বড় দেশ, কত দল, কত শত মানুষ, তুমি হয়েছ মাননীয় রাষ্ট্রপতি, দ্রৌপদী মুর্মু, আজ সাঁওতাল জাতি খুশি, আমাদের জয় হয়েছে। আন্তরিকভাবে মুখে মুখে তাৎক্ষণিক বানানো গান।


দ্রৌপদী মুর্মুর জন্য বাংলাদেশের আদিবাসীদের উচ্ছ্বাস–আনন্দ দেখে আমি অনেক ভেবেছি, কেন এমন হয়! সব মানুষের মনের খবর তো আমি জানি না। জয়পুর গ্রামের সাঁওতাল নারী প্রিসিলা মুর্মু, সুচিত্রা মুর্মুরা হয়তো জাতিগত ও সাংস্কৃতিক কারণে, অথবা হৃদয়ের অজান্তে পরস্পরের জীবনসংগ্রামে, বঞ্চনায়, আনন্দ–উৎসবে মিল খুঁজে পেয়েছেন। এটুকুই তাঁরা মনের টানে বাঁধতে চান। ‘যেন দুঃখ–সুখের বুকের মাঝে একই যন্ত্রণা’ ওদের মনে। দ্রৌপদী মুর্মুর কারণে নিশ্চয় এখানে এই সাঁওতালদের জমির অধিকার ফিরে আসবে না। ওদের নতুন কোনো উন্নত জীবনের আশাও আমি দেখি না। হয়তো কোনো দিন এখানে দ্রৌপদী মুর্মুর আসাও হবে না। দেখা হবে না কোনো দিন দুই দেশের পাশাপাশি বাসিন্দাদের। তবু হয়তো অজান্তেই তাঁদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে গেছে এত উঁচু সম্মানীয় পদে আসীন একজন সাঁওতাল নারী, যাঁর কাছে তাঁদের চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই। কেবল শুভকামনা, অভিবাদন জানানো আর নির্মল হাসি–আনন্দ। এই দুঃখের মাঝেও গর্ব করার চেষ্টা।


এই ঢাকা শহরেও জনজাতির মানুষেরা তাৎক্ষণিক সমবেত হয়েছিলেন ২২ জুলাই সংসদ ভবনের সামনে। সাঁওতালরা এসে যোগ দিয়েছেন। গান গেয়েছেন। এনোস হাসদা, প্রভাত টুডু, নিকোলাশ বাস্কে, বিষুরাম মুর্মুরা এসেছেন। কয়েকজন সাঁওতাল নারী নেচেছেন, গান গেয়েছেন। এনোস হাসদা ও বিশুরাম মুর্মু সাঁওতাল ভাষায় দ্রৌপদী মুর্মুকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আর অনুরোধ করেছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেন তাঁকে আমন্ত্রণ জানান। নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে কোনো দিন এমন দিন আসবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও