ঝরে পড়া ছেলে শিক্ষার্থীরা শিশুশ্রমের শিকার হচ্ছে কি
প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলে ও মেয়ে উভয়ের অংশগ্রহণের হার প্রায় সমান। এক্ষেত্রে ছেলেদের নিট এনরোলমেন্ট রেট (এনইআর বা বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী মোট শিশুর বিপরীতে অংশগ্রহণের হার) ৯৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ আর মেয়েদের ৯৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ে এসে ছেলে ও মেয়ের অংশগ্রহণের হারে বড় ধরনের ব্যবধান পরিলক্ষিত হচ্ছে। মাধ্যমিক শিক্ষায় মেয়েদের ক্ষেত্রে এনইআর ৮০ দশমিক ৬২ শতাংশ হলেও ছেলেদের ক্ষেত্রে সেটি ৬২ দশমিক ৮৯। সে হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিকে ওঠার আগে ঝরা হার ছেলেদের ক্ষেত্রেই বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একসময় সচেতনতার অভাবে শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণের হার অনেক কম ছিল। আর যারা ভর্তি হতো, তাদের একটি বড় অংশ বাল্যবিবাহ ও পারিবারিক আর্থিক দুরবস্থার কারণে দ্রুতই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ঝরে পড়ত। যদিও গত কয়েক বছর সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে এ চিত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। উপবৃত্তি ও বিনামূল্যের বইসহ নানা উদ্যোগে দেশের শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে মেয়েদের অংশগ্রহণ ও টিকে থাকার হার অনেক ভালো। তবে ব্যতিক্রম প্রবাহ লক্ষ করা যাচ্ছে ছেলে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। এখনো মাধ্যমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণে এনইআর অনুযায়ী মেয়েদের চেয়ে বেশ পিছিয়ে ছেলে শিক্ষার্থীরা। মূলত পরিবারের দারিদ্র্যের কারণেই ঝরে পড়া এসব ছেলে শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবারের ভরণ-পোষণের তাগিদে জীবিকা উপার্জন করতে গিয়ে ঝরে পড়া এসব শিক্ষার্থী শিশুশ্রমের শিকার বলে আশঙ্কা তাদের।
বিভিন্ন পরিসংখ্যানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে গমনোপযোগী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের হারের ব্যবধান বিশ্লেষণেও দেখা যায়, মাধ্যমিকের আগে ঝরে পড়ার হার ছেলে শিক্ষার্থীদের বেশি। দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুারো (ব্যানবেইস)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, ২০১১ সালে মাধ্যমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণের হার ছিল ৫৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে মেয়েদের হার ছিল ৫৯ দশমিক ৯৪ ও ছেলেদের ৫১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এরপর প্রতি বছরই মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ ধাপে ধাপে বাড়তে থাকলে সেটি বেড়েছে প্রধানত মেয়ে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করে। ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তির হার বেড়েছে ২০ দশমিক ৬৮ শতাংশীয় পয়েন্ট। এর বিপরীতে ছেলেদের অংশগ্রহণ বেড়েছে মাত্র ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশীয় পয়েন্ট। ২০২০ সাল শেষে মাধ্যমিকে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তির হার ৮০ দশমিক ৬২ শতাংশ। ছেলেদের ক্ষেত্রে তা ৬২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।