যেভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনুভূতিহীনতার সৃষ্টি করছে
ধরুন, আপনি মোবাইল চালাচ্ছেন। ১০ মিনিট ধরে ফেসবুক বা ইউটিউব স্ক্রল করলেন। আপনি দেখলেন মেসির সেরা ১০ গোল, তারপর আপনি দেখলেন সিরিয়ার বোমা বিস্ফোরণের একটা ছোট্ট ভিডিও। এবার আপনি দেখলেন সুজির হালুয়ার রেসিপি। দেখলেন মহাবিশ্বের সাপেক্ষে পৃথিবী, সবকিছু কত ছোট—এমন একটি ভিডিও। তারপর আপনি দেখলেন আপনার কাছের বন্ধু বিয়ে করে হানিমুনে গেছে মিসর, সে রকম কয়েকটি ছবি। দেখলেন একটা পান্ডা, চিতাবাঘ বা একটা বাচ্চা হয়তো বিড়ালের সঙ্গে খেলছে বা এ রকম কিছু। ১০ মিনিট শেষ। আপনি কী অনুভব করছেন? উত্তরের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন, আপনার আবেগ অবশ হয়ে যায়নি তো?
আপনার আবেগ অবশ হয়ে যায়নি তো?
আপনার কী মনে হয়, বেশির ভাগ মানুষ এ প্রশ্নের উত্তরে কী বলবে? আসলে আপনার কিছুই অনুভূতি হচ্ছে না। ভীষণ কষ্ট থেকে অত্যন্ত আনন্দের ভিডিও, অনেক জ্ঞানের ভিডিও, টাইম পাসিং ভিডিও—এসব থেকে সবশেষে আপনার ভেতর স্রেফ কোনো অনুভূতিই হয় না। আমরা ‘ইমোশনালি নাম্ব’ (আবেগিক অবশতা) বোধ করি। মাঝে মাঝে ‘ইমোশনাল নাম্বনেস’ থাকাও ভালো। সব সময় ইমোশনালি খুব সক্রিয় থাকাও ঠিক নয়। তবে অনুভূতিহীনতা দীর্ঘস্থায়িত্ব পাওয়া বা চিরস্থায়িত্ব হওয়াটা ভয়াবহ ব্যাপার। সেখান থেকে খুব সহজেই একজন হতাশার অতলচক্রে পড়ে যেতে পারেন। তারপর ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনও হতে পারে। বাকি জীবনের জন্য তার যেকোনো কাজের ‘একাগ্রতা’ হারিয়ে যেতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ইমোশনাল নাম্বনেস অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আরও অনেক কিছু থেকেই এই অনুভূতিহীনতার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন বাবা–মায়ের বিচ্ছেদ বা পারিবারিক বিপর্যয় অথবা ছোটবেলার কোনো মানসিক আঘাত। কিন্তু বর্তমান সময়ে যে হু হু করে অনুভূতিহীনতা বাড়ছে, এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। যেটা দেখে আপনার আনন্দিত হওয়ার কথা, তাতে আপনি আর আনন্দ পাচ্ছেন না। আপনার কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে না। বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালো লাগছে না। কোনো কিছুতেই আপনার কিছু আসছে যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় আপনার সৃজনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনি কোনো কাজ ঠিকভাবে করতে পারবেন না। কোনো দল পরিচালনা করতে পারবেন না। কেননা, আপনার ভেতরে কোনো ইমপ্যাথি বা সহমর্মিতা নেই। যুক্তি আর আবেগের সমন্বয় ঘটিয়ে কোনো কিছু সঠিকভাবে ভাবতেও আপনি ব্যর্থ।
- ট্যাগ:
- লাইফ
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
- দ্বিধা
- অনুভূতি