কেউ বলে বৃক্ষ কেউ বলে নদী
অনেক বছর আগে, গুনলে ত্রিশ বছর হবে, আমি একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম, নাম দিয়েছিলাম ‘কেউ বলে বৃক্ষ কেউ বলে নদী’; পেছনে প্রণোদনটা ছিল এক তরুণের প্রশ্ন। বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখে সে জানতে চেয়েছিল কোনটা ঠিক জীবন কি বৃক্ষের মতো নাকি নদীর? এ রকমের এটা নাকি ওটা প্রশ্নের মুখোমুখি হলে মাঝামাঝি পথ নেওয়াটা নিরাপদ, আমিও সে পথ নিয়েই বলেছিলাম দুটোই সত্য। জীবনের সঙ্গে বৃক্ষের মিল আছে, তার খাড়াখাড়ি ওপরে উঠে যাওয়াতে, নদীর মিল আছে তার আড়াআড়ি প্রবহমানতায়। এখনকার দিনে মনে হয় ওই রকমের প্রশ্ন আর মুখোমুখি কেউ করে না। এখনকার দিনে হয়তো প্রশ্নটা দাঁড়াবে কোন তুলনাটা ঠিক, গাছের, নদীর, নাকি যন্ত্রের? এককালে মানুষ গাছে থাকত, নেমে এসে হাত ও হাতিয়ার ব্যবহার করেছে। অসংখ্য যন্ত্র, অজস্র উদ্ভাবনা এখন তার হাতের মুঠোয়। সে নদীর মতো যতটা না প্রবহমান, যন্ত্র নিয়ে তার চেয়ে অধিক ব্যস্ত। জগৎটা এখন ছোট হয়ে গেছে বড় হতে গিয়ে।
তা গাছ বলি আর নদীই বলি উভয়েই খুব বিপদে আছে। কাঠুরেরা এখন অনেক বেশি তৎপর বৃক্ষনিধনে। দখলদাররা সারাক্ষণ ব্যস্ত নদী দখলে ও দূষণে। প্রকৃতি নিজেই তো বিপন্ন। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরা গবেষণার বড় বড় দায়িত্বের ভেতরে থেকে মাঝেমধ্যে আমাদের জানাচ্ছেন যে সৌরজাগতিক এমন একটা বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, যাতে শুধু পৃথিবী নয় পরিচিত মহাবিশ্বই ধ্বংস হয়ে যাবে। ভাবলে হাত-পা শীতল হয়ে আসে, কিন্তু তবু একেবারে যে শীতল হয় না তার কারণ ঠিক আগামীকালই যে ঘটনাটা ঘটতে যাচ্ছে এমন নয়। কিন্তু যা প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে টের পাওয়া যাচ্ছে সেটা হলো পৃথিবীটা ক্রমেই মনুষ্য বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে। প্রকৃতি এরই মধ্যে অত্যন্ত বিরূপ হয়ে পড়েছে। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা বেড়েছে। আগের তুলনায় ঘন ঘন হচ্ছে। বাংলাদেশে আমরা শরৎকালকে এখন পাচ্ছি বর্ষা ও গ্রীষ্ম হিসেবে। গ্রাস করে ফেলবে। সমুদ্রের পানি উঁচু হয়ে উঠছে, নিচু এলাকা বিলীন হয়ে যাবে। প্রকৃতি ক্ষেপে গেছে। এমনি এমনি ক্ষেপেনি। তাকে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে। সে এখন প্রতিশোধ নেবে। কারা উত্ত্যক্ত করল? উত্ত্যক্ত করল পুঁজিপতিরা। সৌরজাগতিক মহাপ্রলয়ের আগে মনে হয় ধরিত্রীই ধ্বংস হয়ে যাবে। ওই পুঁজি মালিকদের কারণে।