উন্নয়ন কৌশল নিয়ে পুনর্বিবেচনা দরকার
স্বাধীনতার পর থেকে অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে বাংলাদেশ আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক প্রশংসিত হয়েছে। অনেকে এটাকে মডেল কেস বলে থাকেন যে এটাকে অনুসরণ করা যেতে পারে। তবে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কিছু বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়েই এই অর্জন করতে হয়েছে।
অথচ উন্নয়নের গতি বাড়ানো এবং উন্নয়নকে আরো কল্যাণমুখী ও টেকসই করার জন্য চ্যালেঞ্জগুলোর মাত্রা কমিয়ে আনা দরকার। তা না করে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যেই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ যোগ হচ্ছে। বৈশ্বিক নানা ঘটনায় চ্যালেঞ্জগুলো আরো স্পষ্ট হয়ে দেখা দিচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও একই অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে আমাদের অর্থনৈতিক কৌশলগুলো নিয়ে পুনর্মূল্যায়ন এবং প্রাধিকার নিরূপণ করার সময় এসেছে।
আমরা দেখেছি, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা ভালো ছিল। বিশেষ করে প্রবৃদ্ধি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রপ্তানি আয়, মূল্যস্ফীতি বেশ ভালো পর্যায়ে ছিল এবং বিশ্বের সমপর্যায়ের বেশির ভাগ দেশের তুলনায় আমরা অনেক স্বস্তিকর অবস্থানে ছিলাম। কিন্তু অল্প দিনের ব্যবধানেই সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো প্রকট হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের অধিক ছাড়িয়ে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসছে, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটছে, রপ্তানিতে কিছু উন্নতি হয়েছে, কিন্তু রেমিট্যান্স কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বাড়ছে না। মানুষের সামাজিক অবস্থা বা জীবনযাত্রার মাপকাঠি—স্বাস্থ্য, খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দ্রব্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। এর মধ্যে যোগ হয়েছে জ্বালানি সমস্যা। এত দিন আমরা জানতাম যে জ্বালানি নিয়ে সহসাই দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু গ্যাস ও তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। সরকারও আপৎকালীন জ্বালানির সাশ্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এরও একটি দ্বিমুখী প্রভাব রয়েছে। জ্বালানি সাশ্রয় করতে গিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।