চবির কাটা পাহাড়ের গান কিংবা গোঙানি
অসম্ভব হলেও যে জীবনে বারবার ফিরতে চাই, সেটা আমার বিশ্ববিদ্যালয়জীবন। এ জীবনই আমাকে নস্টালজিক করে তোলে বারবার। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমিত্বের অহম, স্বাধীনতা, মুক্তবাক বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেরই অর্জন। বিদ্যে-ফিদ্যে কিছু অর্জন করতে পারিনি, সেটা আমার নিজস্ব সীমাবদ্ধতা। কিন্তু বন্ধুদের নিয়ে যখন ক্যাম্পাসে হেঁটেছি তখন আমরা প্রত্যেকেই হয়েছি পূর্ণেন্দু পত্রীর অমিতাভ; যাঁদের হৃদয়ের মাপ নিয়ে তৈরি হয়েছে এই পৃথিবী। বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পায়ের নিচের মাটি আর আকাশ আমাদের মনের ছাদ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অপার প্রাকৃতিক শোভা শিক্ষার্থীর জন্য একটি বাড়তি পাওনা বটে। সবুজ পাহাড় যেন বুক দিয়ে আগলে রেখেছে বিদ্যাপীঠ আর তার শিক্ষার্থীকে। যে পাহাড় উদ্ধত-বলিষ্ঠ হওয়ার পাঠ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। কিন্তু সে পাহাড়ের খাঁজে-ভাঁজে লুকিয়ে আছে অনেক কথা; কাপুরুষতারও অনেক ইতিহাস। সে বেদনার রক্তপাত ছিল কতক অপরাজনীতির সঙ্গে সরাসরি প্রযুক্ত, স্পষ্টত, প্রকাশ্য। কতক বেদনা ছিল অন্তরালে, দিনের আলো স্পর্শ করতে পারেনি। সন্দেহ নেই, সেখানে ভিকটিম ছিলেন নারী শিক্ষার্থী। যদিও বা কিছু জানা যায়, সেই মেয়ের নানা দোষ- কখনও তাঁর পোশাক, কখনও তাঁর সময়জ্ঞান, আচরণ ইত্যাদির কাসুন্দিতে মূল কত অপরাধ ঢাকা পড়ে গেছে কাটা পাহাড়ের তলায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নারীবান্ধব অবস্থানের চেয়ে নারী শিক্ষার্থীদের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি বরাবরই সামনে নিয়ে এসেছে। এমন আইন নিয়ে আমরা এখনও পড়ে আছি, যেখানে একজন ধর্ষিতাকে ধর্ষণ প্রমাণের জন্য আদালতে বারবার ধর্ষিত হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় তো মিনি বাংলাদেশই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সময়ে এরশাদের পতন হয়। তারুণ্যের কাছেই এরশাদের পতন হয়েছিল। অন্তত সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া প্রত্যেক তরুণ তা-ই মনে করতেন। কারণ, এরশাদশাহি বিভিন্ন বিদ্যাপীঠে শতাধিক তরুণ শিক্ষার্থীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। তখন স্বৈরশাসকের সালতামামি। আমরা প্রত্যাশিত ছিলাম, আমাদের দৃষ্টি ছিল সামনে-গণতন্ত্রের বড় রাস্তার দিকে। আত্মাকে কোলাহলের শপথে নিয়ে যেতে অসুবিধা হয়নি তাই।