কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

বাঁধা বেতনে আপনি মাস চালাচ্ছেন কী করে

প্রথম আলো আনিসুল হক প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২২, ০৯:২৬

‘ভাই, আপনি একটু বসেন। আপনার সঙ্গে কথা আছে।’
‘বসব? একটু দূরে বসি?’
‘না। কাছে এসে বসেন। কিছু মনে না করলে বলবেন কি, আপনার মাসিক বেতন কত?’
‘আমার? এই ধরেন মাসে ৫৫ হাজার টাকা।’
‘খারাপ না। আপনাকে তো তাহলে মধ্যবিত্তই বলা যায়?’
তিনি একটু বিব্রত হওয়ার ভঙ্গি করেন। ‘জি, মধ্যবিত্তই বলেন। নিম্নমধ্যবিত্তও বলতে পারেন।’
‘আচ্ছা। এই যে কাগজে লিখেছে, মূল্যস্ফীতি ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গড়ে ৭ দশমিক ৫৬। এটা কি আপনার বাঁধা আয়ের সংসারে কোনো চাপ সৃষ্টি করেছে?’
‘জি, করেছে তো। আমাকে নানাভাবে সামাল দিতে হচ্ছে। নানা জায়গায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে।’


মাসে ৫৫ হাজার টাকা আয় তো বাংলাদেশে অল্প লোকই করে। আমাদের বাসাবাড়ি-অফিসের সামনে যে নিরাপত্তারক্ষীরা কাজ করেন, তাঁদের বেতন গড়ে মাসিক ১০ হাজার টাকা। ৬ হাজার ৭ হাজারে শুরু হয়। ড্রাইভারদের বেতন গড়ে ২০ হাজার। ওরা কীভাবে সংসার চালায়? বাসাভাড়া দিয়ে ওদের কী থাকে? অথচ ওদের ছেলেমেয়েরাও স্কুলে যায়। ওদেরও বাড়িতে রঙিন টেলিভিশন আছে, ফ্রিজ আছে, হাতে স্মার্টফোন। এই সংসারগুলো কীভাবে চলে, জানি না।


সারাক্ষণ পত্রিকায় ডলার-সংকট, জ্বালানিসংকট, লোডশেডিং, মূল্যস্ফীতি-সংক্রান্ত খবর পড়ি। মতামত পড়ি। টেলিভিশনের টক শো দেখি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুটো ভুল হয়ে গেছে। এক. কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম কম রাখা। দুই. কৃত্রিমভাবে ব্যাংকের সুদের হার কম রাখা। আমরা তেল বা তরল গ্যাস আমদানি করতে পারছি না, কারণ যুদ্ধের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি, আর আমাদের হাতে ডলারের সঞ্চয় কম। ডলারের রেট সরকারিভাবে যা-ই বলা হোক না কেন, আমদানিকারকেরা বাজার থেকে ১০২ টাকা করে ডলার কিনছেন। তো আমদানিকারকেরা যদি বাস্তবে ১০২ টাকা করেই ডলার কিনে থাকেন, তাহলে তো আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়বেই। সে ক্ষেত্রে ডলারের সরকারি বিনিময়মূল্য বাড়িয়ে দিলে কী হয়? অর্থনীতিবিদেরা বলেন, বাড়াতে হবে। তবে রয়েসয়ে। আস্তে আস্তে। ব্যাংকের চেয়ে বাইরে ডলারের দাম বেশি বলে প্রবাসীরা টাকা পাঠাচ্ছেন হুন্ডি করে। ব্যাংকে রেট বেশি পেলে তাঁরা তো ব্যাংকের মাধ্যমেই পাঠাতে পারেন।


তেল আমদানি করার জন্য ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ডলারের মজুতও কম, তেলের মজুতও কম। সরকার তেলের ব্যবহার কমাতে চাইছে। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে রাখা হয়েছে। লোডশেডিং চলছে। অফিস টাইম কমানো হবে। রাত আটটার পর দোকানপাট বন্ধ থাকবে। এভাবে কত দিন? জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরূল ইমাম আর এম শামসুল আলমের সাক্ষাৎকার পড়ি। মন খারাপ থাকে। উৎপাদন না করলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো টাকা পাবে। আমদানি করা তেল-গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র না চালিয়ে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করার দিকে মন দিতে হতো। নিজের শক্তিতে তা করা যেত। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, হিসাব এত সোজা হলে সরকার কি বোকা নাকি এটা করত না। অনুসন্ধানের কূপে বিলিয়ন ডলার লাগে। দশটা কূপ খুঁড়ে যদি একটাতেও গ্যাস না পাই, ওই টাকা কোত্থেকে দেব, কেন দেব? পেলে কত টাকা বিনিয়োগ করে কত টাকার গ্যাস পাব, তা দেখতে হবে না?


আমরা আদার ব্যাপারী। জাহাজের খবর কোত্থেকে রাখব? যুদ্ধ কি থামবে না? রাশিয়া কি ইউরোপে তেল-গ্যাস রপ্তানি আবার চালু করবে না? আমেরিকা তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা কি তুলে নেবে না? পৃথিবীর জায়গায় জায়গায় মন্বন্তর আসন্ন। এদিকে জলবায়ু পরিবর্তন ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া ফেলছে। ইউরোপ পুড়ে যাচ্ছে গরমে। আমরা তাকিয়ে আছি রামপাল আর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে। কয়লাই ভরসা। কয়লার বিরুদ্ধে এত দিন কথা বলে এখন ‘কয়লা নয় কেন’ বলে চিৎকার শুরু করেছি।


আমার সামনে যিনি বসে আছেন, তাঁর মুখের দিকে তাকাই। বলি, ‘সামনে যদি আরও খারাপ দিন আসে?’


তিনি বলেন, ‘গ্রামে চলে যাব। মা বলেছেন, বাবা, গ্রামে আসো। আমার একখান গয়না আছে। সেটা বিক্রি করে তোমাদের ভাত খাওয়াব। মায়ের বয়স হয়েছে, দিন-দুনিয়ার হিসাব বোঝে না। আমার স্ত্রী বলেন, মা, এটা আপনি কী বলেন। এই গয়না না আপনি নাতি-নাতনিদের বিয়ের জন্য রেখে দিয়েছেন? মা বলেন, আগে তো খেয়েপরে বেঁচে থাকা! তারপর গয়না!’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও