জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্যোগ ফল দিচ্ছে কতটুকু
জ্বালানি সংকট কাটাতে সরকারের চোখ সাশ্রয়ে, নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ উদ্যোগ। সাময়িক বন্ধ ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্রের ব্যবহারে লাগাম টেনে বিদ্যুতের চাহিদা আয়ত্তে রাখার চেষ্টা চলছে। তবে সরকারের এসব উদ্যোগে আদতে জ্বালানির সাশ্রয় হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সংশ্নিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
তাঁরা বলছেন, সরকারি কেন্দ্রে ডিজেলের ব্যবহার বন্ধ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমালে ব্যক্তিগত পর্যায়ে জেনারেটরে ডিজেলের ব্যবহার বাড়বে। অনেকে শুরু করবে আইপিএস ব্যবহার। জেনারেটর ও আইপিএসে বিদ্যুতের অপচয় আরও বেড়ে যাবে।
রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোর অধিকাংশ ভবন ও বিপণিবিতানে ব্যবহার হয় জেনারেটর। গতকাল বৃহস্পতিবার মতিঝিল, পল্টন, নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ভবনে রয়েছে জেনারেটর। বিদ্যুৎ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব জেনারেটর চালু হয়ে যায়। পল্টন এলাকার এক বিপণিবিতানের নিরাপত্তাকর্মী জাকির বলেন, 'আগে দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা জেনারেটর চালালে হতো। কয়েক দিন থেকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা জেনারেটর চালাতে হচ্ছে।' গাউছিয়ার ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন বলেন, 'আগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না। এখন দিনে দু-তিনবার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। জেনারেটর চালাতে হচ্ছে বারবার। তেল খরচ বেড়ে গেছে।'
নারায়ণগঞ্জের এক টেক্সটাইল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাঝারি মানের একটি সুতার মিল চালাতে একবেলা বিদ্যুৎ না থাকলে ১৮ হাজার টাকার ডিজেল লাগে। অথচ এ টাকা খরচ করে পাঁচ দিনের বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, লোডশেডিংয়ের ডিজেলের ব্যবহার বাড়ায় তাঁদের খরচ বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে ১০টি ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সরকারি ছোট তিনটি কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। এর বাইরে ছয়টি বেসরকারিসহ সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র দিনে দুই-তিন ঘণ্টার বেশি চালানো হতো না। তাও প্রতিদিন নয়, চালানো হতো যখন বিদ্যুতের চাহিদা খুব বেশি থাকে তখন।
কারণ, এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেক বেশি, ইউনিটপ্রতি প্রায় ৪০ টাকা। ফলে এসব কেন্দ্র বন্ধ রেখে কতটুকু ডিজেল সাশ্রয় হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
যদিও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই সিদ্ধান্তে তাদের বড় অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। এ বিষয়ে বিপিসির কাছে এখনও কোনো সঠিক হিসাব নেই। তবে এক কর্মকর্তা জানান, ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকলে বছরে ১ লাখ ৪০ হাজার টনের মতো ডিজেল সাশ্রয় হবে। দেশে বাসাবাড়ি এবং বাণিজ্যিক খাতে মোট চাহিদার ৯ শতাংশ ডিজেল ব্যবহূত হয়। বছরে এর পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার টন। লোডশেডিং যত বাড়বে, এ খাতে ডিজেলের ব্যবহার তত বাড়বে বলে জানিয়েছেন খাত-সংশ্নিষ্টরা। দেশে বছরে ডিজেলের চাহিদা ৪৬ লাখ টন।
এদিকে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখলেও সেগুলোর পেছনে সরকারের খরচ কমছে না। কারণ বেসরকারি খাতের ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ না কিনলে সরকারকে ক্যাপাসিটি চার্জ নামে একটি মাশুল দিতে হয়। গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিদ্যুৎ না কিনেও সরকারকে গুনতে হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।