মানবাধিকার, জাতিসংঘ ও বৈশি্বক সংকট

দেশ রূপান্তর বদরুল হাসান প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০২২, ০৯:২৯

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ছিল কল্পনাতীত; ৫০ থেকে ৫৫ মিলিয়ন বেসামরিক এবং ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন সামরিক লোক প্রাণ হারায়, ৪০ থেকে ৬০ মিলিয়ন আদম সন্তান হয়ে পড়ে বাস্তুচ্যুত, ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের পর্বতপ্রমাণ সম্পদের বিনাশ ঘটে, আর অনাহার-অপুষ্টি-অচিকিৎসা হয় জীবিতদের নিত্যসঙ্গী। এই মনুষ্যসৃষ্ট দানব বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে যাতে আর ফিরে না আসে, মানুষ যাতে শান্তিতে বাস করতে পারে, পায় তার মৌলিক মানবিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত রসদ, রাষ্ট্রগুলো পায় আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিবাদ মেটানো ও সম্পর্ক উন্নয়নের অহিংস প্লাটফর্ম, স্বল্পোন্নত দেশগুলো পায় তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রচেষ্টার সহযোগিতামূলক ফোরাম, তার জন্য যুদ্ধ শেষে ১৯৪৫ সালে ৫১টি দেশের অংশগ্রহণে প্রতিষ্ঠা লাভ করে জাতিসংঘ।


অনেক অসফলতা ও সমালোচনা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার উন্নয়নে জাতিসংঘের ভূমিকা অসামান্য। প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মাথায় এই প্রতিষ্ঠান সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা  (Universal Declaration of Human Rights) সদস্য দেশসমূহের সামনে হাজির করে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের যে অধিবেশন এই ঘোষণা চূড়ান্ত করে তাতে প্রথম চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এক অসামান্য মানবতাবাদী নেত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডি আন্না এলিনর রুজভেল্ট। অনেক বিরোধিতা সত্ত্বেও তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই ঘোষণায় বেশ কিছু সামাজিক ও মানবিক অধিকার স্থান লাভ করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নে অবদানের জন্য প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান তাকে ‘ফার্স্টলেডি অফ দি ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে ভূষিত করেন। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সুরক্ষায় মার্কিন নেতারা শুধু জাতিসংঘের ওপর নির্ভর করতে চাননি; তারা Rudyard kipling Gi White Man’s Burden এর মর্মার্থ আত্মস্থ করে আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ক্লায়েন্ট দেশগুলোতে পরিস্থিতি উন্নয়নে তাদের দেওয়া সাহায্যের সঙ্গে মানবাধিকার সুরক্ষার শর্ত জুড়ে দেন। একাজে আইনগত বৈধতা দেওয়ার জন্য তারা প্রণয়ন করেন Foreign Assistance Act, 1961। এই আইনের ১১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যে সব দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সরল রৈখিক প্যাটার্ন চালু হয়ে যাবে, সে সব দেশে কোনো সাহায্য দেওয়া যাবে না। আবার অনুচ্ছেদ ৫০২ (বি)-তে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য হলো সব দেশ কর্র্তৃক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার পরিপালনের উন্নয়ন সাধন। এই আইন বলেই মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রতি বছর বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে কংগ্রেসে উপস্থাপন করে। আর আমরা সেটা নিয়ে হইচই করি। 


সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় যে ৩০টি অধিকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তার মধ্যে ২৫ ও ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত অধিকার এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমোক্ত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেকটা মানুষ তার নিজের ও পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও স্বাস্থ্যসেবাসহ একটা জীবনমানের অধিকারী। শেষোক্ত অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সবাই একটা সুশৃঙ্খল সামাজিক ও আন্তর্জাতিক পরিবেশে বসবাসের অধিকারী যাতে স্বাধীনতা ও অধিকার সুরক্ষিত থাকে।


দীর্ঘদিন ধরে বড় পরিসরে যুদ্ধবিগ্রহ না থাকায় জাতিসংঘ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কোন্নয়ন ও নিরাপত্তার চেয়ে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মানবাধিকার নিয়ে বেশি মনোযোগী ছিল; সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্ট এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট তার বড় দৃষ্টান্ত। এই সেক্টরে বহুজাতিক এই প্রতিষ্ঠানটি এতদিন ভালোই কাজ করে যাচ্ছিল। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ সবকিছু পাল্টে ফেলেছে। মনে হচ্ছে সবাই যেন জাতিসংঘ-পূর্ব অবস্থায় ফিরে গেছে। জাতিসংঘ এই যুদ্ধ প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ভূমিকা নিতে পারেনি। এখনো যে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, তার সক্ষমতা বা আলামত কিছুই লক্ষ করা যাচ্ছে না। তবে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখার স্বার্থে সংস্থাটি সদস্য দেশগুলোতে, বিশেষ করে উদীয়মান অর্থনীতি ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে যুদ্ধের যে সব নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, সেগুলোর ধারা বিবরণী দিয়ে যাচ্ছে; আমাদের দেশে যেমন বকাউল্লাহ বলে যায়, আর শোনাউল্লাহ শুনে যায়। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও