ভেজাল প্রসাধন ব্যবহারে বাড়ছে রোগের ঝুঁকি
ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহার বাড়াচ্ছে চর্মরোগের ঝুঁকি। আর এসব ভেজাল প্রসাধনীর সঙ্গে পরিচয় ঘটছে ঘরে বসেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক খুললেই বিভিন্ন ধরনের রং ফরসা করা ক্রিম, পাউডার, সাবান, লোশন, জেল সব কিছুতেই থাকছে ত্বক ফরসা করার উপকরণ। যা ত্বক উজ্জ্বল করা ও সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
ফেসবুক লাইফে এসে কেউ বা বলছেন, সাত দিন ব্যবহারে গায়ের রং ফরসা হয়ে যাবে, কেউ বলছেন পাঁচ দিনে। কেউ বা আবার বলছেন এক থেকে তিন দিনেই মুখের রং ধবধবে ফরসা হয়ে যাবে। কেউ বা আবার বিক্রি করছেন রং ফরসা করা কফি ও জুস। যা প্রতিদিন খেলে গায়ের রং ফরসা হবে বলেও প্রলোভন দেওয়া হয়। এতে আসক্ত হয়ে লাখ লাখ নারী টাকা খরচ করে এসব প্রসাধনী ব্যবহার করে প্রতারিত হচ্ছে। তাৎক্ষণিক ফরসা হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এসব পণ্য ব্যবহারের ফলে, ত্বকের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিসহ ত্বকে দেখা দিচ্ছে নানা রোগের সংক্রমণ বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
মিরপুরের তিথি, উত্তরার শায়লা ও মোহাম্মদপুরের টুম্পা এসব নকল প্রসাধনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, ‘একটা গোলাপি সাবান কিনেছি ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে। সেটি ব্যবহারে গ্লাসের মতো ত্বক হবে বলেছিলেন বিক্রেতা। কিন্তু সেই সাবান এক মাস ব্যবহার করেছি। সঙ্গে জেল ও নাইটক্রিম নিয়েছি, সব মিলে দাম পড়েছে ৫ হাজার টাকার বেশি। কিন্তু দুই মাস বেশ পরিষ্কার ছিল ত্বক। এরপর ত্বকে চুলকানি শুরু হয়, এরপর ওঠে লাল র্যাশ। সেই র্যাশ চুলকানোর ফলে কালো হয়ে ঘা হয়ে যায়। এখন ত্বকের যাচ্ছে তাই অবস্থা। যাদের কাছ থেকে পণ্য কিনে ব্যবহার করেছিলাম তারা বলছেন, ‘আপনি আমাদের কথামতো পণ্য ব্যবহার করেননি, ফলে এমনটা হয়েছে।’ এখন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, রং ফরসাকারী ক্রিম, ব্রণ বা মেছতার ক্রিম মেখে ত্বকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে তাদের কাছে এখন অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। সারা পৃথিবীতে কোথাও রং ফরসাকারী ক্রিম ব্যবহার করে স্থায়ীভাবে ফরসা হওয়ার উদাহরণ নেই। অথচ অনলাইনে নামে-বেনামে বিভিন্ন পেজ খুলে তাদের পণ্য ব্যবহারে অনেক ভালো ফল পাওয়ার দাবি করে পণ্য বিক্রি করছে। ধারণা করা হচ্ছে ভেজাল এসব প্রসাধনীতে স্টেরয়েডের মতো পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে মুখের ত্বক পাতলা হয়ে যায়, ত্বকের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন বা সংক্রমণ হয়। এ ধরনের ক্রিম দীর্ঘদিন ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি হয়। পাশাপাশি ত্বকের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। দীর্ঘ মেয়াদে এসব পণ্য ব্যবহারে ত্বকের ক্যানসার ও গর্ভজাত সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ভেজাল এসব পণ্যে থাকে মার্কারি ও পারদজাতীয় বিভিন্ন উপাদান। পারদজাতীয় ভারী ধাতু শরীর থেকে বের হতে পারে না। শরীরে দীর্ঘ সময় অবস্থানের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। পারদ ত্বকের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া হাইড্রোকুইনন ক্রিম ত্বকের স্বাভাবিক রং পরিবর্তন করে দেয়।