ষাঁড় পুষতে গিয়ে মরতে বসেছেন আলিমুদ্দিন
শরৎচন্দ্রের ‘মহেষ’–এর মতোই আলিমুদ্দিনের শান্ত বাবু (ষাঁড়)। গল্পের গফুর নিজে না খেয়ে মহেষকে খাওয়াতেন। আলিমুদ্দিনও শেষ সম্বল দেড় বিঘা জমি বন্ধক রেখে শান্ত বাবুকে পুষছেন। এবার তার ওজন হয়েছে প্রায় ৩২ মণ। গত দুই ঈদে এত বড় গরুর গ্রাহক মেলেনি। এবার ক্রেতা এসে দাম বলেছেন। কিন্তু আর নিতে আসেননি। এবার বিক্রি না হলে গরুটিকেজবাই করে মাংস বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
গফুরের মতো ষাঁড়ের চিন্তায় খাওয়াদাওয়া ত্যাগ করেছেন আলিমুদ্দিনও। শুধু পার্থক্য হলো, গফুর মহেষের মাথায় আঘাত করে চিরতরে তার ক্ষুধার জ্বালা মিটিয়েছিলেন। আর শান্ত বাবু হঠাৎ অশান্ত হয়ে আলিমুদ্দিনকেই মাথা দিয়ে দেয়ালে চেপে ধরেছিল। প্রাণ যায় যায় অবস্থায় তাঁর ছেলে মাহফুজুর রহমান লাঠি নিয়ে এসে বাবাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন। স্বভাবেশান্ত হওয়ার জন্যই আলিমুদ্দিন তাঁর ষাড়ের নাম দিয়েছিলেন শান্ত বাবু। শুধু আলিমুদ্দিন নন, বাড়ির সব সদস্যের সঙ্গেই বিশালদেহী এই শান্ত বাবুরখুব ভাব। গত সাড়ে চারবছরে সে কোনো দিনকাউকে গুঁতো দেওয়া তো দূরের কথা, ফুঁশফাঁশও করেনি।
গত শনিবার দুপুরে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার কান্দ্রা গ্রামের আলিমুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলে ও স্ত্রী মিলেতাঁর মাথায় পানি ঢালছেন। তার কিছুক্ষণ আগেই তাঁকে ষাঁড়ের কবল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আলিমুদ্দিনের পিঠের চামড়া ছিলে গেছে। শরীরের কয়েক জায়গায় ক্ষত হয়েছে। খবর পেয়ে প্রতিবেশিরা তাঁকে দেখতে আসছেন। আলিমুদ্দিনের স্ত্রী জরিনা বেগম বললেন, ‘গরুর চিন্তায় তাঁর স্বামী দুই দিন কিছু খাননি। এরই মধ্যে গরুটা যা করল, কোনোদিন তা করেনি।’