সবার অবস্থাই প্রাণান্তকর
বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড যেমন গুম, ক্রসফায়ার, এসবের অভিযোগ পুলিশ ও র্যাব উভয় বাহিনীর বিরুদ্ধেই রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বেশ স্পষ্টাস্পষ্টিই সেটা জানানো হয়েছে। র্যাবের সাতজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তারা নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে। আমাদের সরকার অবশ্য যথারীতি অভিযোগ অস্বীকার করেছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যে তাতে সাড়া দিচ্ছে এমন নয়, অনড়ই রয়েছে। এর পেছনে ভূরাজনৈতিক ব্যাপার থাকতে পারে, সরকারি মহল থেকে বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ যাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল ও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের দিকে না ঝোঁকে সে-বিষয়ে সতর্কবাণী জানানোর জন্যই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওই অভিযোগগুলোকে অতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই বক্তব্যের পেছনে কিছুটা সত্য থাকা খুবই সম্ভব; কিন্তু তাই বলে মানুষ যে নিখোঁজ হয়ে যায় সেটা তো আর মিথ্যা নয়। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তো তা জানানোর চেষ্টা করে। তারা সভা করে, সভায় কান্নাকাটির ঘটনা যে ঘটে না এমনও নয়। কিন্তু হারানো স্বজনরা ফেরত আসে না। দু-একজন যারা ফেরত আসেন তারাও মুখ খোলেন না। মনে হয় ভয় পান। সাগর ও রুনি যে নিহত হয়েছেন এটা তো কোনো বানানো গল্প নয়, সবাই জানে, ঘটনায় তদন্তের দাবি উচ্চকণ্ঠেই ও নানা মহল থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কই তদন্ত রিপোর্ট তো জমা পড়ল না। সময় চাওয়া হচ্ছে, সময় দেওয়াও হচ্ছে, চাওয়া-দেওয়ার এই ব্যাপারটা মনে হয় গুনে গুনে সেঞ্চুরি করার দিকেই এগোচ্ছে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ব্যাপারে পুলিশ বাহিনী একেবারেই নির্দোষ এমনটা দাবি করা হয়, প্রদীপ কুমাররা নেই বলেই জানানো হয়; কিন্তু ঘটনা তো ঘটে। পুলিশ জড়িত নয় তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু তাদের তো দায়িত্ব আছে। দায়িত্ব প্রথমত, ওই রকমের ঘটনা যাতে না ঘটে সেটা দেখা; দ্বিতীয়ত, ঘটনা ঘটলে মানুষগুলোকে উদ্ধার এবং দায়ীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পুলিশের কাজ তো মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়াই। তাদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা সবই তো জনগণের টাকাতেই সম্ভব হয়; তাহলে?
সরকারের পক্ষ থেকে এমনও বলা হয় যে গুম হয়ে যাওয়া লোকরা ইচ্ছে করে লুকিয়ে থাকে। সেটা বুঝলাম, কিন্তু তাদের খুঁজে বের করে আনা তো পুলিশের গোয়েন্দাদের কর্তব্য; গোয়েন্দারা যে অদক্ষ এমন বদনাম কেউ করবে না। তাহলে? সম্প্রতি আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরেকটি নতুন এবং বেশ চাঞ্চল্যকর সংবাদ আমাদের দিয়েছেন; সেটা এই যে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো যাদের ‘গুম’ বলছে তাদের অনেকেই নাকি আসলে পানিতে ডুবে মারা গেছে। এ তথ্য অন্যরা কতটা মেনে নেবে জানি না, না নেওয়ারই কথা। বাম গণতান্ত্রিক জোট মেনে নেয়নি। তারা বলেছে, ‘খুবই নিষ্ঠুর, অশালীন ও চরম দায়িত্বহীনতার প্রকাশ এবং গুম হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোর জন্য খুবই বেদনার ও কষ্টের।’ তাদের মতে, ওটি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার শামিল। মনে হয় না তারা বাড়িয়ে বলেছে।