মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রাগুলো বাস্তবায়নই হোক আগামীর টার্গেট
মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমন এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্রত নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩০ জুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। মুদ্রানীতি পাঠ করলে বা মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে গভর্নরের দেওয়া বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে সহজেই অনুমান করা যায়, দেশের অর্থনীতি সবিশেষ চাপের মুখে পড়েছে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে।
মুদ্রানীতি প্রণয়নের আগে বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক এর অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করে থাকে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জন্য গত দুই বছর মুখোমুখি আলোচনার পথ প্রত্যাহার করে ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে মতামত সংগ্রহ করা হয়েছিল। এবার অবশ্য প্রত্যক্ষ মতামত সংগ্রহ করার পদ্ধতিটিই বাছাই করে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
করোনা ভাইরাসের অভিঘাত এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে করোনা সংক্রমণ যখন কিছুটা কমে এসে বিশ্ব অর্থনীতিকে একটু স্বস্তি প্রদানের অবস্থা সৃষ্টি করেছিল, ঠিক তখনই শুরু হয়ে গেল রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য আবারও হয়ে দাঁড়াল উদ্বেগের কারণ। করোনা-উত্তর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ক্রমেই শক্তিশালী হওয়া শুরু হওয়ার মুহূর্তে সরবরাহ চেইনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় বিশ্ব চাহিদা ও সরবরাহের ভেতর একটি গরমিল বা অসাঞ্জস্যতা এগিয়ে এসেছে। ফলে ২০২১ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পণ্যসামগ্রীর দাম ঊর্ধ্বমুখে ছুটে চলেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অনুমান করছে যে, ২০২২ সালে (এপ্রিল ২০২২) উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মূল্যস্ফীতি যথাক্রমে ৫.৭ ও ৮.৭ শতাংশ হতে পারে। এসব দেশে গত জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৩.৯ ও ৫.৯ শতাংশ। আর এ জন্য মূল্যস্ফীতির থাবাকে দুর্বল করে ফেলার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরো অঞ্চল ও ভারতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার বাড়িয়ে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি চালু করেছে। তাদের বিবেচনায় মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরার জন্য বর্তমান পর্যায়ে এটিই সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি।