সুইস ব্যাংক কীভাবে কাজ করে, কীভাবে তথ্য গোপন রাখে
দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ নট এনাফ সিনেমায় জেমস বন্ড এক দৃশ্যে বলেছিলেন, ‘সুইস ব্যাংকের ম্যানেজারকেই যদি বিশ্বাস না করি তাহলে এই দুনিয়ায় আর কাকে বিশ্বাস করব।’ আর ফরাসি লেখক ও দার্শনিক ভলতেয়ার ১৭৯৪ সালে লিখেছিলেন, ‘তুমি যদি একজন সুইস ব্যাংকারকে জানালা দিয়ে ঝাঁপ দিতে দেখো, তাহলেও তাকে অনুসরণ করো, নিশ্চিত জেনো সেখানে অবশ্যই মুনাফা করার মতো কিছু আছে।’
সুইজারল্যান্ড নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে পরিচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদেরও পছন্দের দেশ। আবার গোপন অর্থ রাখার দেশও সুইজারল্যান্ড। সুইস ব্যাংকের কুখ্যাতি বা সুখ্যাতি বিশ্বজুড়ে। অনেক সমালোচনার মুখে কিছুটা উন্মুক্ত হয়েছে, তবে এখনো গোপন অর্থ রাখার অন্যতম নির্ভরযোগ্য জায়গা সুইস ব্যাংক। জেনে রাখা ভালো, সুইস ব্যাংক একক কোনো ব্যাংক নয়, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোকেই সুইস ব্যাংক বলা হয়।
সুইস ব্যাংকব্যবস্থার শুরু কখন
সুইস ব্যাংকব্যবস্থায় গোপনীয়তার ইতিহাস ৩০০ বছরেরও পুরোনো। সপ্তদশ শতকের প্রথম ভাগে ইউরোপের অভিজাত শ্রেণির সম্পদ রক্ষা করার লক্ষ্য থেকে এর যাত্রা শুরু। ১৭১৩ সালে দ্য গ্র্যান্ড কাউন্সিল অব জেনেভা প্রথম ব্যাংক গোপনীয়তার আইন প্রণয়ন করেছিল। সুইজারল্যান্ড সীমান্তের এক পাশের দেশ ফ্রান্সের ব্যাংকগুলো ছিল মূলত খ্রিষ্টধর্মের প্রোটেস্ট্যান্টদের দখলে। ফলে ক্যাথলিকরা সুইস ব্যাংকগুলোতেই অর্থ রাখত। এমনকি ফ্রান্সের সে সময়ের ক্যাথলিক রাজাও সুইস ব্যাংকে অর্থ রাখতেন। ১৭৮০ সালের দিকে সুইস ব্যাংকে রাখা অর্থ বিমার আওতায় আনা হয়। এতে তাদের আর্থিক নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রতি আস্থা আরও বাড়ে। ১৮১৫ সালে সুইজারল্যান্ড একটি নিরপেক্ষ দেশের মর্যাদা পেলে সুইস ব্যাংকে অর্থপ্রবাহ অনেক বেড়ে যায়।
গোপনীয়তার আইন কীভাবে এল
সুইস ব্যাংকের ভাগ্য বদলে যায় মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। যুদ্ধ মানেই অনিশ্চয়তা আর অর্থনৈতিক সংকট। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ই ফ্রান্সের অভিজাত ধনিক শ্রেণি সুইস ব্যাংকে আরও বেশি করে অর্থ রাখা শুরু করে। যুদ্ধের অর্থ সংগ্রহে ইউরোপের অনেক দেশই নতুন নতুন যুদ্ধকর আরোপ করেছিল। এই কর ফাঁকি দিতেই ইউরোপের দেশগুলো থেকে ধনীরা সুইস ব্যাংকে ভিড় বাড়ায়। কারণ, সবাই জানতেন সুইস ব্যাংক তাদের নাম প্রকাশ করবে না।