কিন্তু মানুষকে তো বাঁচতে হবে

দেশ রূপান্তর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২২, ১০:২৫

যাকে আমরা পরাধীনতা বলে জানি তার ভেতরকার মূল ব্যাপারটাই ছিল আমাদের সম্পদের ওপর বিদেশিদের কর্তৃত্ব। বিদেশি শাসকরা এ দেশে কর্মচারী, চাকর-বাকর, দালাল ইত্যাদি তৈরি করেছে। উদ্দেশ্য ছিল এদের সাহায্যে এখানে যে সম্পদ রয়েছে তা দখল করা। কাজটা পাঠান ও মোগলরা করেছে, পরে ইংরেজরা করেছে আরও জোরেশোরে। পাঠান ও মোগলদের পাচার করা সম্পদ তবু উপমহাদেশের ভেতরেই রয়ে গেছে; ইংরেজরা তা নিয়ে গেছে নিজেদের দেশে। খনিজসম্পদ উত্তোলন, কল-কারখানা স্থাপন, যান্ত্রিক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা, এমনকি একসময়ে নীল, পরে পাট ও চা-এর উৎপাদন, সবকিছুর মালিকানা ইংরেজ শাসকদের হাতেই ছিল। এবং জাহাজ ভর্তি করে তারা সোনাদানা থেকে শুরু করে কত যে অর্থ ও বিত্ত পাচার করেছে তার হিসাব বের করা কঠিন। ফলে তারা যে পরিমাণে ধনী হয়েছে আমরা ঠিক সেই পরিমাণেই নিঃস্ব হয়েছি। তাদের দেশে শিল্পবিপ্লব ঘটেছে, এবং আমরা পরিণত হয়েছি তাদের আটকে পড়া ক্রেতায়।


একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মূল কারণ ছিল সম্পদের ওই মালিকানাই। ইংরেজের ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র যা ঘটেছে, তথাকথিত স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রেও তাই ঘটেছিল। পূর্ববঙ্গের সম্পদের ওপর কর্তৃত্ব পূর্ববঙ্গবাসীর ছিল না, কর্তৃত্ব ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের। আমরা বলেছিলাম এ দেশে যা কিছু আছে তা আমাদেরই থাকবে। ওই দাবির ব্যাপারে বাঙালিদের দৃঢ়তা দেখেই পাঞ্জাবি সেনাবাহিনী ক্ষেপে গেল, এবং গণহত্যা শুরু করে দিল, নইলে বাঙালিদের সঙ্গে ওই রকমের বিপজ্জনক খেলায় তারা মত্ত হতে যাবে কেন? যুদ্ধ শেষ হয়েছে। আমরা জয়ী হয়েছি, কিন্তু দেশের সম্পদের ওপর দেশবাসীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি? না, হয়নি। আর সেজন্যই তো বলতে হয় যে আমরা এখনো মুক্তি পাইনি। সামাজিক সম্পত্তি ক্রমাগত ব্যক্তিমালিকানায় চলে যাচ্ছে। কল-কারখানা ব্যক্তিগত হয়ে গেছে, এবং যাচ্ছে। সবচেয়ে মারাত্মক যে বিপদ তা হলো দেশের সম্পদ বিদেশিদের হাতে চলে যাওয়াটা। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন শাসক শ্রেণি রুখে দাঁড়াবে কী, উপরন্তু বিদেশিদের সাহায্য করছে। এটাই হচ্ছে এখন আমাদের শাসক দলের রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। আর এটা তারা করছে নিজেদের স্বার্থে। বিদেশিদের কাছ থেকে যেটুকু পাওয়া যায় তাতেই তাদের লাভ, এবং সেই লাভটাকে বিদেশে গচ্ছিত রাখাটাই নিরাপদ এই হচ্ছে তাদের নীতি।


রাষ্ট্র যখন আছে তখন রাজনীতি থাকবেই, এবং আছেও। অবৈধ পথে যারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ফেলেন তারা প্রথমেই যা বলেন তা হলো তাদের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নেই, এবং তারা অতিদ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে অব্যাহতি নেবেন। কিন্তু অবৈধ পন্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার কাজটা তো নির্জলাভাবেই রাজনৈতিক, এবং একেবারে প্রথম দিন থেকেই তারা নতুন রাজনীতি শুরু করেন; দল গড়েন, তাদের পক্ষে কাজ করতে প্রস্তুত এমন লোক খোঁজেন, তাদের উপদেষ্টা বানান, লোক-দেখানো সংস্কারের নামে সাধারণ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি করেন এবং সাজানো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিজেদের নির্বাচিত বলে ঘোষণা করে দেন। সাধারণ মানুষও বিলক্ষণ রাজনীতি বোঝে, রাজনীতিকে তারা বলে পলিটিকস। ওই পলিটিকস কথাটা সবকিছু পরিষ্কার করে দেয়। বোঝা যায় যে পলিটিকস সবখানেই আছে। রয়েছে এমনকি পরিবারের ভেতরেও, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রেও। এই ছোট ছোট পলিটিকস রাষ্ট্রে যে পলিটিকস চলছে তার মূল্যবোধ দ্বারাই পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় পলিটিকসের মূল্যবোধটা কী? স্পষ্টতই সেটা হলো নিজের দিকে সবকিছু টেনে নেওয়া, নিজের আখের নিজের হাতেই গুছিয়ে নেওয়া।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও