নদী বাঁচাও, বন্যা ঠেকাও
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ৪০৫টি নদী, যদিও এর সঠিক সংখ্যা নিয়ে মতভিন্নতা আছে।
দেশের বৃহৎ নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, গোমতী, কর্ণফুলী ইত্যাদি। দেশের আন্তর্জাতিক নদীর সংখ্যা ৫৭। এর মধ্যে ৫৪টির মিলনস্থল ভারত। আর তিনটির মিয়ানমার।
সমাজ গঠনে নদীর ভূমিকা প্রাচীনকাল থেকেই প্রাধান্য পেয়ে আসছে। নদী মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য এক অংশ। নদ-নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতার ইতিহাস। সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে নদীকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু বাংলাদেশ আজ ‘নদীমাতৃক’ পরিচয় হারিয়ে ফেলতে বসেছে।
দেশের ১৫৮টি নদী সংকুচিত হয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। প্রমত্তা পদ্মা, মেঘনা আর যমুনার মাঝখানে এখন শোভা পাচ্ছে বাড়িঘর। নদীগুলোর মাঝখানে জেগে ওঠা বালুচরে কৃষকরা শুরু করেছে কৃষির আবাদ। বিগত পঞ্চাশ বছরে দূষণ ও দখলের ফলে নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলেছে। এ দখল ও দূষণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নদী ভরাট।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগের নাম হলো সিলেট। নদী গবেষকদের মতে, সিলেটের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত নদীর সংখ্যা দুই শতাধিক, যেগুলোর উৎসমুখ হলো ভারত। পাহাড়ি ঢল বেয়ে সৃষ্ট পানি প্রবাহই হলো এসব নদী। প্রতিবছর এ পাহাড়ি ঢল বয়ে আনে লাখ লাখ টন বালি ও মাটি। বয়ে আসা এ বালি ও মাটি সিলেট বিভাগের এসব নদ-নদী ও হাওড়-বাঁওড়কে ভরাট করে দিয়েছে।
এই বালি ও মাটি শুধু নদ-নদীর তলদেশকেই নয়, বরং এর উৎসমুখও ভরাট করে দিয়েছে। ভারতের মণিপুর রাজ্যের পাহাড়ে মাও সাংসাং থেকে উৎপন্ন একটি নদীর নাম বরাক। এটি সিলেটের জকিগঞ্জের অমলসীদ হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা দুই শাখায় প্রবাহিত হয়েছে। সেখানে দীর্ঘ এক যুগ ধরে সুরমার প্রবেশমুখ ভরাট হয়ে চলেছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বরাকের পানির ৭৫ শতাংশ কুশিয়ারা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ পরিস্থিতির কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সুরমা নদী। ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার জায়গার মধ্যে সুরমায় চর জেগেছে অন্তত ২০টি। এসব চর পলিথিন ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপে উঁচু টিলায় পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে আবাদি জমি থাকলেও পানির অভাবে কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছেন না।
এ কারণে আবাদি জমিগুলোও এখন অনাবাদি হয়ে পড়ছে। যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সুরমা নদীতে পানির প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নদীভাঙন। ফলে তীরবর্তী মানুষ নানা দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে।