সুনামগঞ্জে মানুষ কি হেরে যাবে?
শুক্রবার (১৭ জুন) বিকালে রাজধানীর গুলশানে একটি বহুতল ভবনের বারান্দা থেকে বৃষ্টির ছবি তুলে ফেসবুকে দেওয়ার পরে সিলেট থেকে বন্ধু মাকসুদা সেই ছবির নিচে লিখেছে, ‘তোমার আষাঢ় আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’
মনে পড়ে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর উপকূলে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানার পরে নোয়াখালী থেকে বন্ধু শামীম মোবাইল ফোনে একটা মেসেজে দিয়েছিল: ‘আমরা ভেসে ভেসে মরে যাই, কেউ খোঁজ নেয় না।’
শামীমের সাথে যোগাযোগ হয়েছিল তার দুই তিন দিন পরে। কারণ, বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল ফোনে চার্জ দেওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। মোবাইল নেটওয়ার্কও তখন খুব সহজ ছিল না।
এই শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটা দীর্ঘ মেসেজ পাঠান, যার সারাংশ এরকম: ‘ভাই, সুনামগঞ্জে কিছুই নাই। নেটওয়ার্ক নাই। বিদ্যুৎ নাই। এখন একটু নেট পাইছি। এক ভবনে আশ্রয় নিছি। পুরো বাসা মালামালসহ পানিতে। সারা শহর ডুবে আছে। মানুষ কোথায় আশ্রয় নেবে। দ্রুত পানি বাড়ছে। অনেকে সাঁতরে যাচ্ছে। বৃদ্ধ ও শিশুরা কী করবে। মানুষ না খেয়ে, জায়গা না পেয়ে দুর্ভিক্ষ লাগবে।’
আসলেই কি তাই? এরকম বন্যা কি বাংলাদেশে এর আগে হয়নি? তখন কি দুর্ভিক্ষ হয়েছে? দুর্যোগ মোকাবিলায় যে বাংলাদেশকে রোল-মডেল বলা হয়, সেই দেশের মানুষকে কেন লিখতে হয় ‘তোমার আষাঢ় আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে?’ সেই দেশে একজন সচ্ছল মানুষকেও কেন খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাবে দুর্ভিক্ষের কথা ভেবে আতঙ্কিত হতে হয়?
ওই সাংবাদিক লিখেছেন, এমন বন্যা সুনামগঞ্জর মানুষ আগে দেখেনি। অন্তত এই সময়ে যারা প্রবীণ, তারাও এমন ভয়াবহ বন্যার কথা মনে করতে পারেন না। বন্যার পানি ধনী গরিবের ব্যবধান ঘুচিয়ে সবাইকে আশ্রয়প্রার্থী করেছে। যারা একতলা বাড়িতে কিংবা উঁচু ভবনের নিচতলায় থাকেন, তাদের কেউই এখন আর নিজেদের ঘরে নেই। সবাইকে উঁচু ভবনে আশ্রয় নিতে হয়েছে।