প্রস্তাবিত বাজেটের স্বরূপ ও বাস্তবতা
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও উন্নয়নভাবনা বা দর্শন মোটা দাগে ৬টি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন বলে মনে হয়। যেমন: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা; গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের মূল্যবৃদ্ধিজনিত বর্ধিত ভর্তুকির জন্য অর্থের সংস্থান; বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যবহার এবং মন্ত্রণালয়ের উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ করা; শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন; অভ্যন্তরীণ মূল্য সংযোজন কর সংগ্রহের পরিমাণ এবং ব্যক্তি আয়করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখা। এখন বাজেট প্রণয়ন, প্রস্তাব, পাস এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে পর্যালোচনা, মিডিয়ার সৌজন্যে ক্রমবর্ধমান আমজনতার সচেতনতার বিষয়ে পরিণত হতে দেখা যাচ্ছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক। এটাও অনস্বীকার্য যে উপরোক্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে যথেষ্ট ও যথাসাধ্য পথ পন্থা পদ্ধতি পরিকল্পনার কথা উঠে এসেছে।
যদিও বাজেট প্রাক্কলন এবং বাস্তবায়ন সিদ্ধান্ত প্রদানের নির্দেশনা অতিমাত্রায় বৃত্তাবদ্ধ ধ্যান-ধারণার মধ্যে আটকে যাচ্ছে, স্ববিরোধিতা বিদ্যমান, নীতি-নৈতিকতা স্বার্থস্বন্ধ্য হয়ে উঠছে তবুও তুলনামূলকভাবে ২০২২-২৩-এর বাজেটটিকে সরলীকরণ করে, ‘একটি ভালো বাজেট’ বলা যায়। এখন এই বাজেট বাস্তবায়নে অদক্ষতা, একদেশদর্শিতা ও দুর্নীতির জটাজালের খোলস থেকে ‘ভালোভাবে’ বেরিয়ে আসুক এ প্রত্যাশা সবার। প্রস্তাব পেশের পাঁচ দিনের মাথায় ‘সম্পূরক বাজেট’টির কণ্ঠভোটে (প্রয়োজন ছিল না, কেননা ট্রেজারি বেঞ্চ অতিমাত্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, অতি লঘিষ্ঠ বিরোধী পক্ষের ছাঁটাই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জন্য যথেষ্ট) পাস হওয়ায় ভালো বাজেটের সফল বাস্তবায়নের প্রত্যাশা যাতে মাঠে মারা না যায় তা দেখাটাই একটি চ্যালেঞ্জ।
এই ছয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জটিলতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির পরিবেশকে অধিকতর অর্থবহকরণে আন্তরিক প্রয়াস এবং নির্বাচনের আগের বছরের রাজনৈতিক অর্থনীতির এই বাজেটটিতে রাজনীতির উপাদান অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রতীয়মান হচ্ছে। জাতীয় বাজেটের (যা মূলত ব্যয়ের) আকার প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় ততটা বেশি না হলেও রাজস্ব আয় প্রাক্কলন ওরফে লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধিও যে প্রস্তাব করা হয়েছে তার বাস্তবায়ন পরিস্থিতি যদি আমলে না নেওয়া হয় তাহলে এই বাজেট দিয়ে কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জন আশঙ্কার মধ্যে থাকবে। যদি এই সব প্রাক্কলন বাস্তবায়নযোগ্যতার নিরিখে নিরূপণ করা না হয়, চাহিদা বা কঠিন বাস্তবতাকে সঠিকভাবে ঠাহর না করা হয়, সঠিক অনুমানের ভিত্তিতে রাজস্ব আদায় এবং সেই সঙ্গে উন্নয়ন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা না ধরা হয় তাহলে বাজেটের বড় ধরনের কাট বা পুনর্বিবেচনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।