বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা, বাজেট ও স্থূলতা
পুরো দেশ জুড়ে ফুলে-ফেঁপে উঠছে অন্ধ ধর্মবিশ্বাস। সে তুলনায়, মানবিকতা, যুক্তিবাদ, বিজ্ঞান, গবেষণা, দর্শন ইত্যাদি চর্চা শোচনীয়ভাবে কমছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যন্ত গবেষণা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। গবেষণা এখন আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুরুত্ব পাচ্ছে না। মানুষ এখন সেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই পছন্দ করছেন, যারা উপার্জন-প্রতিযোগিতা-অনুশাসন-আনুগত্যের মন্ত্রে দীক্ষিত ‘চাকরিযোগ্য’ মানবসম্পদ তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আপাতত সেই লক্ষ্যেই স্থির। উচ্চশিক্ষা মানে এখন চাকরির বাজারে প্রতিযোগী তৈরি করা, আর সেই সব প্রতিষ্ঠানই উৎকৃষ্ট যারা বেশি টাকা কামাবে অথবা টাকা কামানোর শিক্ষা দেবে। শিক্ষা পরিণত হয়েছে উন্নত পণ্যে। আর বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হয়েছে পণ্য বিক্রির ‘দোকান’। এই ‘দোকানে’ গবেষণা, সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন গুরুত্ব পাচ্ছে না।
যেখানে গবেষণা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবার কথা, সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই গবেষণার খাতে এক টাকাও খরচ করছে না! দেশের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনওরকম গবেষণাকর্ম হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যুক্তি, বিষয়টি বাধ্যতামূলক নয়। ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বা ইউজিসি। কারণ ইউজিসির একটা বাধ্যবাধকতা আছে যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মৌলিক গবেষণা থাকতে হবে। সে কারণে গবেষণাকে একেবারে বাদ দিতে পারছে না। হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েই কেবল গবেষণা হচ্ছে। অবশ্যই সেটা উল্লেখ করার মতো না। মৌলিক গবেষণার সংস্কৃতি আস্তে আস্তে লোপ পাচ্ছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন নতুন জ্ঞান সৃষ্টির কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে, এ ব্যাপারে যেন একটা নীরব চক্রান্ত চলছে। আমরা ক্রমে গবেষণা-উদ্ভাবন-জ্ঞানহীন একটা সমাজের দিকেই যেন ক্রমে ধাবিত হচ্ছি।
গবেষণার ক্ষেত্রে বরাদ্দের অভাবের কথা বলা হয়। কিন্তু যতটুকু যা বরাদ্দ আছে, সেটুকু কি ঠিকঠাক মতো ব্যয় হয়? কোনো উল্লেখযোগ্য মৌলিক গবেষণা হয়? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে পাওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের কেবল উচ্চশিক্ষা দেয় না, সেখানে নানা ধরনের গবেষণাও করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ ওই কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেওয়া হয় ভালো অঙ্কের টাকাও। কিন্তু, চলতি বছরে গবেষণার কাজে বাংলাদেশের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় এক টাকাও খরচ করেনি। এর মধ্যে আছে আটটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও গবেষণার কাজে কোনো টাকা খরচ করেনি। এই তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি সমীক্ষায়।