
অসভ্য-বর্বর-জানোয়ারদের বাচ্চাবাজির দেশ!
তমাল অমল রায় : কয়েকদিন ধরে জমিয়ে শীত পড়েছে। বিয়ের মৌসুম। নাচ, গান, হৈ-হুল্লোড়। জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া। তার সাথে চিন্তাও যে একেবারে নেই, তা নয়। আপনার ছেলেটির পরীক্ষা যে সামনে! অতএব, বিয়েবাড়ির আনন্দের মাঝে লক্ষ রাখছেন, আপনার সন্তানটির যেন ঠা-া না লাগে। সিলেবাস যেন শেষ হয়ে যায়। হয়ে যাবে! আপনার একমাত্র ছেলে। বাছাই করা পাঁচজন প্রাইভেট টিউটর। চিন্তা নেই। বিয়েবাড়ির বার কাউন্টার থেকে একটা ব্ল্যাক ডগের পেগ তুলে নিন আর আমার সাথে চলুন সিলেবাসের বাইরে আর একটা বিয়েবাড়ি থেকে ঘুরে আসা যাক, যেখানে শিকে গেঁথে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে আপনার সন্তানের মতো হাজার হাজার কিশোরের স্বপ্ন!উত্তর আফগানিস্তানের বালখ প্রদেশের একটি গ্রাম। থাবা বসিয়েছে শীত। রুক্ষ, পাথুরে এ-অঞ্চলে সবুজের দেখা পাওয়া ভার! সেখানেই বিয়েবাড়ি। যদিও পাত্র-পাত্রীর দেখা নেই এখনো। এসে গেছে নিমন্ত্রিতরা। পাথরের ঘরটিতে জনা তিরিশ লোক বসে আছে। সারা ঘরটি বুরহান আর শিককাবাবের গন্ধে ম-ম করছে। মদের জার, গেলাসের ছড়াছড়ি। কেউ কেউ পাইপে গাঁজা টানছে। ঘরের মাঝখানে নীল সিল্কের চুমকি বসানো সালোয়ার, চড়া মেকাপ, ঘুঙুর পরে অত্যন্ত চটুল ভঙ্গীতে নেচে যাচ্ছে একজন। দাঁত দিয়ে তুলে নিচ্ছে আমেরিকান ডলারের নোট। নাচতে নাচতে গিয়ে বসছে অতিথিদেও কোলে। কেউ হাত বোলাচ্ছে বুকে, কেউ পাছায় চাপড় মারছে। ঠিক যেমন বি-গ্রেডেড হিন্দি সিনেমায় দেখে থাকেন। কী ভাবছেন? বেশ্যা? আসুন, আলাপ করিয়ে দিই বেশ্যাটির সাথে। নাম জাভেদ। বয়স ১২। চমকে গেলেন? এখন চমকাবেন না। শুধু চুপ করে তাকিয়ে দেখুন ওই বুকে আপেল গোঁজা বাচ্চাটির দিকে। গত সাত দিনের ঘুম আটকে রয়েছে ওর মাশকারা লেপা চোখে। একদল শিশুমাংসলোভী হিংস্র পশুর মধ্যে যৌনউত্তেজনা দিয়ে যাচ্ছে নিঁখুত লাস্যে। বাড়িতে বারোটা পেট। রুটির আকাল। শরীর ছাড়া বেচার তো কিছুই নেই! ভালো করে তাকিয়ে দেখুন, কে নেই এই এদের ভীড়ে? পুলিশ, উকিল, সামরিক প্রধান, সামাজিক সুরক্ষা অফিসার থেকে শিক্ষক পর্যন্ত! হ্যাঁ, যাদের ওপর শিশুসুরক্ষার ভার, তারা এই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে একমাত্র এন্টারটেনমেইন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে এই ‘বাচ্চা বাজি’কে! একটা গোটা সমাজ গিলে খাচ্ছে দেশের কৈশোর।বাচ্চাবাজির এই ইতিহাস বহুদিনের। কঠোর মুসলিম অনুশাসনে অভ্যস্ত আফগানিস্তান। মেয়েদের এখানে নাচা-গানা তো দূরের কথা, মুখ দেখানোও নিষেধ। তাদের কাজ শুধু বছর বছর ছেলে জন্ম দেয়া আর বাড়িতে রুটি তৈরি করা। কিন্তু তা দিয়ে তো আর যৌনশখ মেটে না! তাই নারীর অভাব দূর করে নারীর বেশধারী ছেলেরা। ‘বাচ্চা বেরেশ’ মানে যাদের দাড়ি ওঠেনি এখনো। বাড়িতে কুকুর, মুরগির মত পোষা বাচ্চা। পার্টিতে যারা মেয়ে-সেজে মনোরঞ্জন করবে, আবার রাতে মালিকের বিছানা গরম করবে। যার বাড়িতে যতো বেশি বাচ্চা, সমাজে তার প্রতিপত্তি ততো বেশি। ভাবুন, পেডোফিলিয়া এখানে সমাজ স্বীকৃত। শিশু যৌনদাস রাখা এখানের প্রথা। সুবিধা হলো, এই বাচ্চা যৌনসঙ্গীদের নিয়ে যেখানে-সেখানে যাওয়া যায়। পার্টিতে নাচগান করা যায়। নারীবর্জিত আফগানিস্তানে তাই বাচ্চা বাজির রমরমা। যেমন গুল। ওর যখন ৯ বছর বয়েস, তখন খাবার আর স্কুলের লোভ দেখিয়ে কাবুলে নিয়ে আসে এক পারিবারিক বন্ধু। একজন সামরিক কমান্ডারের কাছে বেচে দেয়া হয় তাকে। বিছানার সাথে শেকল দিয়ে বাঁধা ছিলো গুল। প্রতিরাতে ধর্ষণ করা হতো তাকে। পায়ুছিদ্র দিয়ে অবিরাম রক্তক্ষরণ হতো। এইভাবে পোষ মানানোর পর নাচ শেখানো হয় তাকে। অল্পদিনেই পারদর্শী হয়ে ওঠে সে। তারপর প্রতি রাতে ভাড়াখাটা এবং শেষে এক বা একাধিক ব্যক্তি সঙ্গে সাথে যৌনক্রিয়া। এই যন্ত্রণার জীবন থেকে মুক্তি পেতে গুল একদিন পালায়। কিন্তু কোথায়? ধরা পড়লে মৃত্যু। পুলিশের কাছে গেলে জেল। বাড়িতেও ঠাঁই হয় না তার। আফগান-পরিবারে বাড়ির সম্মান রক্ষায় ধর্ষিতাকে পর্যন্ত মেওে ফেলা হয়। ভেবে দেখুন, এতো কিছু ঘটেছে মাত্র ১৫ বছর বয়সে। যখন স্বপ্ন দেখার শুরু, তখন ড্রাগস আর নেশার জগতে হারিয়ে যায় গুলের মতো হাজার হাজার কিশোর।দাড়ি একবার উঠে গেলে পুরনো ঘোড়ার মতো মূল্যহীন হয়ে পড়ে বাচ্চারা। তাদের কম পয়সায় বেচে দেয়া হয় ক্রীতদাস হিসেবে। গুলের মতো কেউ কেউ নেশাকে আশ্রয় করে, কেউ হয়ে যায় পুরুষবেশ্যা, কেউ বাচ্চাদের দালাল। আবার ধর্ষণের বদলা নিতে কেউ বা জঙ্গিদের দলে নাম লেখায়। জঙ্গিগোষ্ঠিরা এদের ব্যবহার করে পুলিশ বা সামরিক বাহিনীর ওপর আক্রমণ করার জন্য। ছিন্নভিন্ন তরতাজা লাশ পড়ে থাকে ধূসর প্রাঙ্গণে। রক্তের ছিটে লাগে স্বপ্নে...কয়েকশো বছরের পুরনো এই প্রথা শেষ করার জন্য সরকার বা রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংগঠনগুলোপ তেমন চেষ্টা করেনি। একমাত্র নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে শরিয়ত আইনে তালেবানরা বাচ্চাবাজিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলো। এর সাথে যুক্ত কেউ ধরা পড়লে প্রাণদ- দেয়া হতো। ফলে এটাপ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। ২০০৩ সালে তালেবানদের হাত থেকে দেশ উদ্ধার করার পর কারো কারোর হাতে পয়সা ও ক্ষমতা চলে আসে। আবার যুদ্ধজীর্ণ দেশে গরিবের সংখ্যাও বেড়ে যায়। বিদেশী এন জি ওর হাত ধরে উন্নয়নের খাতিরে ডলার আসতে শুরু করে। আবার শুরু হয় বাচ্চাবাজি। এখন সারা আফগানিস্তানে ছড়িয়ে পড়েছে আবার বাচ্চাবাজির প্রতিযোগিতা। কতোজন? না, বলা সম্ভব নয়। কেউ জানে না, কতো শিশুকে প্রতিদিন ধর্ষণ করা হচ্ছে? কতোজন প্রতিদিন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই। জানিয়েও লাভ নেই। কারণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে পেডোফিলিয়া। সরকার, প্রশাসন, কোর্ট, পুলিশÑসবার মাথারা বাচ্চা পোষে সমাজে নিজের কলার তোলার জন্য। আফগানরা এখন মেয়ে নয়, শিশুতে আগ্রহী। জানি না, জাভেদ বা ওর বন্ধুরা কোনোদিন আকাশে ডানা মেলতে পারবে কিনা। কোনোদিন কোনো সান্তা বড়দিনের রাতে ওদের মুখের মেকআপ নষ্ট করা চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে হাতে তুলে দিতে পারবে কি জলরঙ, ক্যানভাস? ফেসবুক থেকে