বড় সমস্যা গণতন্ত্রায়নের
দীর্ঘস্থায়ী পরাধীনতা একটি জাতিকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তার নিদর্শন বাঙালি জাতির ইতিহাসে বেশ উজ্জ্বলরূপেই প্রকাশিত। বিদেশি শাসকদের এই ভূখণ্ডে শোষণের কুফল দেখা গেছে বৈষয়িক ও আদর্শিক উভয় ক্ষেত্রে। বৈষয়িকভাবে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পড়েছে। এখন আমরা স্বাধীন হয়েছি বটে; কিন্তু সেই যে অভাব তৈরি হয়েছিল, তা থেকে মুক্তি পাইনি। আদর্শিক পীড়নটাও কম ছিল না। মেরুদণ্ড দুর্বল হয়েছে এবং একদিকে পরমুখাপেক্ষিতা, অন্যদিকে হীনম্মন্যতা দেখা দিয়েছে। এই যে অর্থনৈতিক ও আদর্শিক কারণে নত হয়ে পড়া, সেটাই ঐতিহাসিক কারণ আমাদের দুর্দশার।
এ দেশে বারবার মন্বন্তর দেখা দিয়েছে; আর সেসব ভয়ংকর ঘটনায় পুরুষের তুলনায় নারী কম করে হলেও দ্বিগুণ কষ্ট সহ্য করেছে। পুরুষ পালিয়ে গেছে অন্যত্র, মেয়েরা যেতে পারেনি, মারা পড়েছে ভিটাবাড়িতে। সাহস করে যারা পথে বের হয়েছে, তারা বাঘ-ভালুকের চেয়েও ভয়ংকর সব পুরুষের হাতে পড়ে যারপরনাই নিগৃহীত হয়েছে। ধর্ষণ, পণ্য হিসেবে বিক্রি সবকিছু ঘটেছে। ১৯৪৩-এর মন্বন্তর অনেক দূরের ঘটনা নয়; কিন্তু সেখানেও ঘটনা ওই একই। ১৯৪৭-এর দাঙ্গায় ও দেশত্যাগে কত মেয়ে হারিয়ে গেছে, তার হিসাব নেই। ১৯৭১-এ পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে গণহত্যায় মেয়েরা যেভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে, তাতেই ওই দুর্বৃত্তদের ভয়াবহ মুখচ্ছবি সবচেয়ে স্পষ্টরূপে ধরা পড়েছিল। স্বাধীনতার পরও মেয়েরা নিরাপত্তা পায়নি। ধর্ষণের সংখ্যা ও ধরন বৃদ্ধি পেয়েছে। ধর্ষকদের মধ্যে আইনি সংস্থার লোকজনের সম্পৃক্ততা অনেকবার মিলেছে। নারীর জীবনযাত্রা এখনও এই সমাজে নির্বিঘ্ন, এত অগ্রগতি সত্ত্বেও, নারী পাচার হচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে নানা দেশে। দেশের ভেতরও তার চলাফেরা নিষ্ঠুরভাবে সীমিত।
- ট্যাগ:
- মতামত
- গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদ