আফিম চোরাচালানি : বাচ্চু মিয়া ও আরও কজন
ঢাকার মানে একেবারে খাস ঢাকার, আগামসি লেনের। অনেকেই সামনাসামনি তাকে না দেখে থাকলেও ঢাকা শহরের আফিম ব্যবসায়ী এবং আফিমসেবী প্রায় সবাই বাচ্চু মিয়ার নাম জানত। বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রভাবশালী লোকদের জানাশোনা ছিল। তার পরও সরকার তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে মোটেই দ্বিধা করেনি। কেবল বাচ্চু মিয়া নয়, তার সঙ্গীদের বিবরণীও দিয়েছে List of Smugglers and Suspects of Opium and other Intoxicating Drugs নামক একটি গোপনীয় সরকারি প্রকাশনায়। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোসহ সব সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে বাচ্চু ও তাদের সহযোগীদের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। একালে কি এমনটা আশা করেন? যদি করে থাকেন তার নাম দুরাশা। স্মাগলারদের গডফাদাররা ক্ষমতাধর, তাদের নিজেদের পেশা যাই হোক না কেন অর্থের চালান আসে নিষিদ্ধ উৎস থেকেই।
আফিমসেবী
ঢাকার চোরাচালানিদের মধ্যে বাচ্চু মিয়ার কোড নম্বর ২৯। পুরো নাম তোসাদ্দেক হোসেন, বাবার নাম মোহাম্মদ হোসেন। বাচ্চুর বয়স ৩৪ বছর। উচ্চতা পাঁচ ফুট পৌনে পাঁচ ইঞ্চি। তার সে সময়কার ঠিকানা ৭৩ আগামসি লেন। বাচ্চুর শরীরের গড়ন মাঝারি ধরনের, গায়ের রংও বলা হয়েছে মাঝারি, (মাঝারির ব্যাখ্যা করা হয়নি। সম্ভবত কালো এবং ফর্সার মাঝখানে শ্যামলা), চোখ ছোট ছোট, নাক খাড়া, মুখ বন্ধ থাকে, কানের লতি লম্বা, ডান বাহুতে একটা পোড়া দাগ, ডান হাতের উপরিভাগে একটা বড় কাটা দাগ। বিশের দশকের শেষভাগে বাচ্চু ও তার ভাই ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি মাদক ব্যবসায়ী। চোরাকারবারে বাচ্চুর একজন উল্লেখযোগ্য সহযোগী হচ্ছে তার সৎ ভাই কলকাতার করপোরেশন স্ট্রিটের একজন ট্যাক্সি-মালিক নয়াজান। সে ২১ নম্বর লোয়ার চিৎপুর রোডের তিল্লা মোহাম্মদ পেশোয়ারির কাছ থেকে আফিম ও কোকেইনের চালান সংগ্রহ করে রেলওয়ের সার্জেন্ট মস এবং আহমদ হোসেন, ফেকু শেখ ও আবদুল মান্নানের মাধ্যমে কলকাতা থেকে গোয়ালন্দ, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, জগন্নাথগঞ্জ, ফুলছড়ি ও বাহাদুরাবাদ ঘাট রুটে পাঠিয়ে থাকে। কখনো কখনো চাঁদপুর ও ভৈরব রুটও ব্যবহার করে। বাহকেরা মধ্যবর্তী কোনো রেলওয়ে স্টেশন বা স্টিমার ঘাটে উপযুক্ত ব্যক্তির হেফাজতে চালানটি রেখে লোকাল ট্রেনে কিংবা নৌকায় ঢাকা চলে আসে। ঢাকায় আসার সময় সাধারণত তারা কোকেইন বা অন্য কোনো মাদক দ্রব্য বহন করে না। টেলিগ্রাফে বাচ্চুর দল বার্তা আদান-প্রদান করে থাকে। তাদের বিশেষ কোড শব্দ রয়েছে। আয়েশা বেওয়া তাদের স্টোরকিপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- আফিম উৎপাদন