‘মানিক মিয়াকে জেলে নিয়ে একটা ভুল করে ফেলেছিল গভর্নমেন্ট’

জাগো নিউজ ২৪ আবদুল গাফফার চৌধুরী প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২২, ১০:২০

(তৃতীয় পর্ব)


মুনতাসীর মামুন: তারপর তো আপনারা ঊনসত্তরের দিকে...
আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী: হ্যাঁ ঊনসত্তরে ছয় দফা থেকে আবার এগারো দফা ছাত্ররা নিয়ে আসল অভ্যুত্থান হলো, ওই ছয় দফা দেওয়ার পরেই তো তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ঢোকানো হলো। আগরতলা ষড়যন্ত্র থেকে তিনি বেরিয়ে আসলেন। এই আগরতলা ষড়যন্ত্রের ঘটনাকে আমার আওয়াজ নিয়ে আমি পুরো সমর্থন দিই। ইত্তেফাক বন্ধ করল। ইত্তেফাক অফিস, প্রেস সিজ করল। তারপর মানিক মিয়াকে জেলে নিল- তখন একটা ভুল করে ফেলেছিল গভর্নমেন্ট। ভুলটা হলো এই ইত্তেফাক প্রেস এবং অফিসটাকে তারা দখল করেছে। ইত্তেফাক পত্রিকা ব্যান্ড করেনি। উকিলরা ফাঁকটা ধরল যে ইত্তেফাক তো এখনও আছে। তখন আমার একটা ছিল অনুপম মুদ্রণ- ছোট একটা মেশিন দুই পাতা ছাপানো যায় ইত্তেফাকের। আমার অফিস থেকে তিনদিন ইত্তেফাক বেরিয়েছে। তারপরে আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হলো। আমি তখন পালিয়ে খুলনা চলে গিয়েছিলাম। ইত্তেফাক বন্ধ করে দিল। শেখ সাহেব বেরিয়ে গেলেন। তখন আওয়াজে আমি যদ্দুর পেরেছি, একমাত্র আওয়াজে ছয় দফা ছেপেছি। ছয় দফার পরে তো এগারো দফা, আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলার কেস। তারপর আগরতলা মামলার সময় আমি ইন্টারোগেটেড হয়েছি। তারপরে গণঅভ্যুত্থান।


মুনতাসীর মামুন: গণআন্দোলনের ব্যাপারটাতে শিল্পী সাহিত্যিক বা অন্যান্য, এরা কতটুকু কীভাবে এসেছিলেন বা সমর্থন করেছিলেন। আপনার কি মনে হয় যারা আপনাদের সমসাময়িক যারা সরকারি চাকরিতে ছিলেন, লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, বিভিন্ন আন্দোলনে রাজনীতিতে ছিলেন সবার মধ্যে ঊনসত্তরের মোটামুটি একটা সমন্বয় একটা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের....


আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী: একটা প্রচণ্ড ঐক্য গড়ে উঠেছিল। কিন্তু যে ঐক্যটাকে ধ্বংস করেছে এটা হচ্ছে আমি বললে মনে হবে পার্টিজান। চৈনিকপন্থি, তখনকার চৈনিকপন্থিরা সাংঘাতিক। আমি তো মনে করি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে জামায়াতিদের চাইতেও খারাপ ভূমিকা নিয়েছে এই সোকলড চৈনিকপন্থিরা। যেমন- তখন ছয় দফা বা এগারো দফা শেখ সাহেব বললেন, ছয় দফাকে এগার দফায় একমোডেট করার জন্য। এটা আমার ছয় দফারই অঙ্গ এবং ছয় দফারই এক্সপ্লেনশনে। তার উত্তরে তারা বলল, ‘শুনেছ ভাই বঙ্গবন্ধুর রঙ্গ এগার দফা হইল নাকি ছয় দফার অঙ্গ।’


রাস্তার মধ্যে ওরা স্লোগান দিয়েছে। তখন হলিডে পত্রিকা একটা জঘন্য রোল প্লে করেছে। শেখ মুজিবের ছয় দফা সিআইএ-এর দলিল, সিআইএ তৈরি করে দিয়েছে, আলতাফ গওহর তৈরি করে দিয়েছে। তারা যখন আইয়ুব খা’র সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারীর কাজ করছেন। আইয়ুব খা’র সঙ্গে মওলানা ভাসানীর একটা গোপন বৈঠক হয়। যাদু মিয়া এটা অর্গানাইজ করেছিলেন। আমি তো এখনও ভুলিনি।


হলি ডে’র অপপ্রচার সরকারি অপপ্রচার কিন্তু আমি বলব যে ছাত্রলীগের চাইতেও ওই যে তোফায়েল টোফায়েলদের কথা বলা হয়- ছয় দফা মুভমেন্টের সাংস্কৃতিক বেইজটা করেছে ছায়ানট, ছাত্র ইউনিয়ন, মতিয়া গ্রুপ। আমার একটা ধারণা যে, আওয়ামী লীগ সব সময় ফসল খেয়েছে- বীজটা রোপণ করেছে বামপন্থি মুভমেন্ট। প্রত্যেকটা। তারপরে বাংলা ভাষা সাহিত্য বাঙালি স্বাধিকার দাবি। আওয়ামী লীগ তো প্রথম দিকে কোনোটাতেই ছিল না এর মধ্যে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রথমে উর্দুকে সমর্থন করে স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন- তারপর শেখ মুজিবুর রহমান করাচিতে গিয়ে তার কাছ থেকে বাংলা ভাষার পক্ষে বিবৃতি আদায় করে নিয়ে আসেন। মওলানা ভাসানী কিছুতেই বাংলা বলতে রাজি ছিলেন না। উনি সব সময় বলতেন স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান চাই-ওনার স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের কনসেপ্ট আর শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশের কনসেপ্টের মধ্যে আসমান জমিন প্রায় পার্থক্য। ওনার স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের কনসেপ্ট ছিল লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে আর শেখ মুজিবেরটা ছিল মাল্টিন্যাশনালের ভিত্তিতে- যে ভারতবর্ষটা মাল্টি ন্যাশনাল কান্ট্রি, বাংলাদেশটা বাঙালি জাতির। এ রকম অনেক সূক্ষ্ণ কারুকার্য আছে, এগুলো আলোচনা করা যাবে না। তো চৈনিকপন্থিরাই এর ভিতরে সবচাইতে বেশি ষড়যন্ত্র করেছে।


জামায়াতিরা ছিল সামনের প্রকাশ্য শত্রু। যেটা শত্রুতা করেছে তারা সামনাসামনিই করেছে। ভেতর থেকে ছুরি মারার ব্যাপারে এরা অদ্বিতীয় ভূমিকা পালন করে গেছে, বিশেষ করে একটা বিহারিকে সামনে রেখে- ওই যে এনায়েতুল্লাহ খান টান এরাই। সালাউদ্দীন মাহমুদ নামে একটি লোক ষাটের দশকে আবির্ভূত হলো। এটা কে? হি ওয়াজ অ্যা প্ল্যান্টেড ম্যান বাই পাকিস্তান ইন্টালিজেন্স ডিপার্টমেন্ট। সে আমাদের সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হয়ে গেল, সে গ্রগ্রেসিভ উর্দু রাইটার্স গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেল। তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ব্যুরো অব ন্যাশনাল রি-কন্সট্রাকশনের (খাজা শাহাবুদ্দীনের জামাই)। তার এমন শক্তি বাড়ল যে মানিক মিয়ার ইংরেজি সাপ্তাহিকের সিটির এডিটর হয়ে গেল সে। অনেক পরে তার মুখোশ ধরা পড়ল। তাকে কীভাবে আমাদের ভিতরে ঢোকানো হয়েছিল। কিন্তু হ্যাটস অফ টু ওয়াহিদুল হক-ছায়ানটের মুভমেন্টটা হলো, তার পারিবারিক জীবন বিপর্যস্ত হয়েছে, এটা নিয়ে ওয়াহিদুল হক অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছে। কিন্তু ছায়ানটটা এখন রবীন্দ্রসঙ্গীতকে ধারণ করে। আর রবীন্দ্রনাথ যদ্দিন আছেন তদ্দিন পর্যন্ত বাঙালিকে জামায়াত কেন অন্য কোনো দেশ অন্য কোনো ষড়যন্ত্র তাকে সরাতে পারবে না। তো রবীন্দ্রনাথকে ঘাঁটি করে বাংলা ভাষাকে ঘাঁটি করে ছায়ানটের আন্দোলন। এই যে প্রগতিশীল মুভমেন্টে আন্দোলন সমকালের আন্দোলন, সওগাতের নাসির উদ্দীন সাহেবের একটা বিরাট ভূমিকা ছিল। এই যে একটা আশ্রয় দিলেন- সেই দুর্দিনে ওইখানে কাজী মোতাহার হোসেন আসতেন, হাসান যে মিটিং ডাকতো, ফয়েজ আহমেদ সেক্রেটারি ছিল, ওইখানে বসে এই সব আলোচনা হয়েছে। ইয়াং রাইটারদের টেনে রাখা প্রগতির শিবিরে, এই যে বোরহানরা চেষ্টাটা করেছে খেয়ে না খেয়ে। আট আনা পয়সা দিয়ে সারাদিন খেয়ে তারপর এই যে পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ করা।


মুনতাসীর মামুন: আপনি আগে বলেছিলেন যে এনায়েতুল্লাহ খান বা মেনন ওরা দুই ভাই যখন...
আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী: মেননের রোলটা তখনও এত খারাপ ছিল না, খারাপ ছিল সাদেক খান আর এনায়েতুল্লাহর।


মুনতাসীর মামুন: আপনি কি এটা ঊনসত্তরের কথা বলছেন? কারণ সাদেক খানকে তো আমরা সত্তর দশকের পরে দেখছি। এর আগে কিন্তু সাদেক খান আমার মনে হয় ইংল্যান্ডেই ছিলেন?


আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী: না, না, না, সাদেক খান দেশেই ছিলেন। সাদেক খান ইংল্যান্ডে এসেছেন দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও