‘এখনো চোখে ভাসে সবুজ শাড়িতে মায়ের বুকে বাঁধা মৃত শিশু’
ঝোড়ো বাতাস আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই ঘুড়ি ওড়াতে বের হয়েছিল ১০ বছরের ইমরান। পলিথিনের ঘুড়িটা মাত্র আকাশে উঠেছে। এর মধ্যে মাঠঘাট পেরিয়ে ভাইকে ডাকতে দৌড়ে এসেছিল ১৫ বছর বয়সী বড় বোন ইরানি। দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা কয়রা ততক্ষণে ঘোর অন্ধকারে ডুবতে বসেছে। এমন গাঢ় অন্ধকার কপোতাক্ষ থেকে উঠে আসছে, না আকাশ থেকে নামছে, তা বোঝা যায় না।
দুই ভাই–বোন দৌড়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে শুরু হলো বাঁধে পানি আছড়ে পড়ার দানবীয় শব্দ। গ্রামের ভেতরের খাল ভরে উঠেছে। আর কয়েক মুহূর্ত মাত্র! ইমরান প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘ঘুড়ি ধরব, না দৌড়ে বাড়ি আসব, নাকি উল্টো দিকের পথে দৌড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠব—সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো বয়স হয়নি তখন। তবে নদীর পাড়ের ছেলে বলে বয়স অল্প হলেও এটুকু বুঝেছিলাম, যে ঝড় আসছে তা আমাদের বাঁচতে দেবে না।’
কাঠমারচরের বাসিন্দা শেখ আমিরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যসংখ্যা পাঁচ। তাঁর ছোট সন্তান ইমরানের একটা শখের গরু ছিল। ওর নানা নাতিকে উপহার দিয়েছিলেন। সে গরুকে আদর করে ডাকা হতো ‘সাদা ময়না’ নামে। ২০০৯ সালের প্রলয়ংকরী ঝড়ের দিন বর্গাচাষি আমিরুল ইসলামের পরিবারের মতো কয়রার অনেক পরিবার শুধু প্রাণে বেঁচে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল।