
তিন প্রকার সন্ত্রাসী এবং বাংলাদেশের পাঁচ বিপদ
কোণঠাসা হয়ে থাকলেও বাংলাদেশে ধর্মপন্থি দলগুলোর মধ্যে এখনও জামায়াতে ইসলামী সবচাইতে বড় ও সংগঠিত দল। এর বাইরেও, বিশেষত তথাকথিত 'সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ' শুরু হওয়ার পর থেকে নিত্যনতুন সংগঠনের নাম শোনা যায়। তবে এর কোনটা আসল বা কোনটা নকল তা বলা কঠিন। 'জঙ্গি' বা 'সন্ত্রাসী' দমনের নামে যুক্তরাষ্ট্রের 'সন্ত্রাস দমন' মডেলে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশও। একই উদ্দেশ্য সামনে রেখে ভারতের সঙ্গেও যৌথ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এই মডেলে প্রবেশের অর্থ যে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীর বর্ধিত পুনরুৎপাদন এবং সন্ত্রাসের চিরস্থায়ীকরণ- তা আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে।
জঙ্গি, ইসলামী সন্ত্রাসী বলে যে প্রচার 'সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের' মূল ভিত্তি, তাতে তিন ধরনের ইসলামপন্থি গোষ্ঠীর বা 'সন্ত্রাসী'র দেখা পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমত, আসলেই কিছু ইসলামপন্থি গ্রুপ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যারা 'ইসলামী রাষ্ট্র' 'খিলাফত' প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এদের কেউ কেউ সন্ত্রাসী পথই সঠিক মনে করে। তবে সবাই 'সন্ত্রাসী' পথ অনুমোদন করছে, তা নয়। পশ্চিমা ব্যবস্থার তারা বিরোধিতা করে নিজেদের বুঝমতো ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে চায়। তবে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, তার যে মানুষ ও পরিবেশ বিধ্বংসী চরিত্র; তারা সেটার বিরোধিতা করে, না ধর্মীয় বিচারে নির্দিষ্টভাবে খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের বিরোধিতা করে- সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এ বিষয়ে সবার অভিন্ন বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় না। অধিকাংশের বিরোধিতা ধর্মীয় বিবেচনায়। সে কারণে সাম্রাজ্যবাদের মূল শক্তি তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে।
দ্বিতীয়ত, আরেকটি ইসলামপন্থি ধারার নাম আমরা প্রচারণায় পাই, যারা বিভিন্ন দেশে গোয়েন্দা সংস্থার পালিত গোষ্ঠী বলে ধারণা করা যায়। বিভিন্ন সময়ে তাদের ব্যবহার করা হয়, যা অনেক সন্ত্রাসী ঘটনা নিয়ে সরকারের রহস্যজনক ভূমিকা থেকে পরিস্কার হয়। এসব ঘটনার কোনো কূলকিনারা পাওয়া যায় না। কিন্তু সেগুলো দেখিয়েই দেশে দেশে নতুন নতুন নিপীড়ন ও নিয়ন্ত্রণমূলক চুক্তি, বিধি ও নীতি তৈরি হতে থাকে।
তৃতীয়ত, মিডিয়ার মাধ্যমে নির্মিত। এসব প্রচারণার মাধ্যমে আতঙ্ক তৈরি এবং নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা, সামরিকীকরণ, নিরাপত্তা বাণিজ্য সবই বৈধতা পায়। আতঙ্ক এখন সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব রাজনীতি এবং লুটেরা দেশীয় রাজনীতির প্রধান অবলম্বন। খুবই পরিকল্পিত ও একচেটিয়া প্রচারণার কারণে ইউরোপ-আমেরিকার মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক আর মুসলিমবিদ্বেষ দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারতসহ মুসলিম সংখ্যালঘু দেশগুলোতে মুসলিম নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। মুসলিম পোশাক, মুসলিম নাম, দাড়ি, হিজাব, বোরকা দেখলেই অনেকের মধ্যে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া হয়; বর্ণবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এই প্রবণতা মুসলমান জনগোষ্ঠীকেও ধর্মীয় পরিচয়কে গুরুত্ব দেওয়ার দিকে ঠেলে দেয়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ধর্ম ও রাজনীতি