শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমাতে হবে
সিয়ামের বয়স ছয় বছর ছুঁই ছুঁই, সবে স্কুলজীবন শুরু করল। জীবনের প্রথম স্কুল কিন্তু সিয়ামের মাঝে তেমন কোনো আবেগ, উচ্ছাস বা আনন্দ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অথচ স্কুল শুরুর প্রথম দিনটি সবার জন্য হয় জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ও আকর্ষণীয় দিন। সিয়ামের বিষয়টি খেয়াল করেছে ওর মা-বাবা, সে কেমন যেন মনমরা ও চুপচাপ থাকে, স্কুলে যাওয়ার সময় মন খারাপ করে, সকালের নাশতা খেতে চায় না। চাকরিজীবী বাবা-মা তাই খুবই উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। কিন্তু তারা নিশ্চিত ও সচেতন, তাই হাল ছাড়েননি। সমস্যার মূল কারণ খুঁজতে শুরু করলেন। অনেকদিন পর্যবেক্ষণ ও পরিলক্ষণ করে তারা কিছু বিষয় অনুধাবন করেছেন।
প্রথমত, সিয়াম স্কুলকে আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করতে পারেনি। তার কাছে স্কুলকে আনন্দের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করাও হয়নি; বরং চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। স্কুল শুরুর আগে শিশুরা স্বাধীন জীবনযাপন করে, কিন্তু স্কুল শুরু হলে তার দৈনন্দিন জীবন একটা নিয়মের মধ্যে চলে আসে। পাশাপাশি নতুন পরিবেশে বড় হওয়া শিক্ষক ও শিশুদের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। ছোট বয়সে আসলেই তা কষ্টকর। পরের বিষয়টা প্রথম সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বর্তমান শিশুরা জন্মের কিছুদিন থেকেই তাদের খাওয়া, খেলাধুলা ও বিনোদনের জন্য মোবাইল, ল্যাপটপ বা ট্যাবের স্ক্রিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বাচ্চারা মোবাইলে ভিডিও, কার্টুন দেখতে দেখতে খুব সহজেই খাবার খাচ্ছে, এতে মাও খুব খুশি। কিন্তু বাচ্চারা বুঝতে পারে না তারা কী খাচ্ছে, কতটুকু খাচ্ছে। খাবারে স্বাদ কেমন, কারণ তাদের পুরো মনোযোগ থাকে মোবাইলের স্ক্রিনে। একইভাবে অতিমাত্রায় মোবাইল-নির্ভরতা বাচ্চাদের সুকুমার বৃত্তি ও মানবীয় গুণাবলি বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। পরিবেশ, প্রকৃতি ও বাহ্যিক জ্ঞান সবদিক থেকেই তারা পিছিয়ে পড়ছে। তারা এখন পাখি বা গাছ দেখলে আলাদা করে নাম বলতে পারে না, জাতীয় দিবসগুলো জানে না, বাংলা মাসের নাম বলতে পারে না। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রত্যেক অপশনগুলো তাদের নখদর্পণে। এছাড়া অতিরিক্ত মোবাইল এবং কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকায় শিশুদের চলাফেরা, খেলাধুলা কম হচ্ছে। ফলে তারা স্থ‚লাকার শরীর ধারণ করছে এবং তাদের চোখে বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এমনকি সারাক্ষণ শুয়ে বসে থাকার ফলে এবং খেলাধুলার মতো শারীরিক কসরত না থাকার ফলে তাদের হাঁটাচলা এবং দৌড়ানো সঠিক, ভারসাম্যপূর্ণ এবং শক্ত হচ্ছে না।