শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিক্ষা
অনেকটা অবধারিতই ছিল বিষয়টি। কেবল অপেক্ষার পালা ছিল, কখন ঘটে বিস্ফোরণ। সেই বিস্ফোরণটা অবশেষে ঘটেই গেল। ক্ষমতা বাঁচাতে পারলেন না শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ছোট্ট এই দ্বীপদেশটিতে যে অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা অনাকাক্সিক্ষত; কিন্তু অনেকটা অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। অনুরাধাপুর থেকে কলম্বোর রাজপথ যেন ফুঁসে উঠেছে, রাজাপাকসের পৈতৃক বাড়িতে জ্বলছে আগুন, বিশেষ ব্যবস্থায় পরিবারসহ উদ্ধার করে নিয়ে যেতে হয়েছে তাকে।
এই পরিস্থিতির আগাম আভাস তো পাওয়া যাচ্ছিল গত কয়েক মাস ধরেই। খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রবল সংকটে হিমশিম খাচ্ছিল পুরো শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকটে পড়ে অনন্যোপায় সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অর্থনৈতিক সংস্থার কাছে হাত পেতেও কুল পাচ্ছিল না আর অন্য দিকে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া জনতা ফুঁসছিল বিক্ষোভে। সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে দেশটিতে।
কেন এমন হলো, এই নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে গত দুই মাসে। রীতিমতো রাজপরিবার হয়ে ওঠা শ্রীলঙ্কার শাসক পরিবারের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের ময়না-তদন্ত হয়েছে, হচ্ছে বিশ্বজুড়েই। তবে এখানেই কিন্তু শেষ নয়!
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সহযোগী সংগঠন আঙ্কটাড বলছে, শ্রীলঙ্কার এই ঘটনা উন্নয়নশীল বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই এক সতর্কসংকেত। শ্রীলঙ্কাকে দিয়ে শুরু হলো, কিন্তু এর প্রভাবে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের আরও অর্ধশতাধিক দেশ আছে এমন ঝুঁকিতে। কেবল নিজেদের প্রশাসনিক ভুলভ্রান্তি আর দুর্বলতাই যে নয়, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও গুরুত্বপূর্ণ দুটি অনুষঙ্গসারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেওয়া মহামারী; আর তার রেশ ভালো করে কেটে ওঠার আগেই বেজে ওঠা যুদ্ধের দামামা।