জমিদার বললে কি তাঁরা মাইন্ড করবেন?
ট্রেনের সামান্য টিকিট চেকারের জন্য মাননীয় রেলমন্ত্রীর ভাগনেরা অপদস্থ হলেন, এ জন্য আমরা দুঃখিত। টিকিট ছাড়া ট্রেনে উঠেছেন, শোভন কামরার টিকিট কিনতে রাজি হলেও এসি কামরা ছাড়াতে চাননি, এসব মামুলি বিষয়। তাই বলে তাঁদের এসি কামরার আরাম থেকে বের করে আনতে হবে? তবে মন্দেরও ভালো থাকে। টিকিট আছে কিনা জানতে না চাইলে দেশবাসী কীভাবে জানতে পারতেন যে, এঁরা রেলমন্ত্রীর মহান ভাগনে! টিটিই-র কারণে সকলের জানা হলো, এই সেই মাননীয় মন্ত্রীর সম্মানিত ভাগনেরত্ন। এ রকম প্রচারের ফলে ভবিষ্যতে আর কেউ তাঁদের কোথাও আটকাবে না। সম্ভবত এই সুফল চিন্তা করেই বেকুব টিটিই-র চাকরি ফেরত দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমরা মাননীয় মন্ত্রী, তাঁর সম্মানিত স্ত্রী এবং ভাগনেবৃন্দের মহানুভবতার তারিফ করি।
আশা করি ভবিষ্যতে আর এমন হবে না। মন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী, সেই স্ত্রীর ভাই-বোন, তাঁদের সন্তানেরা, শালা-দুলাভাই-খালু-ফুপা আর লতায়-পাতায় থাকা আাত্মীয়রা মিলেই তো ক্ষমতার বলয়। এঁরাই তো অভিজাত শ্রেণি। অভিজাত শ্রেণিই তো ক্ষমতার শোভা। সেই শোভায় কালি লেপা মানে ক্ষমতারই অপমান। আশা করি আমাদের আইনপ্রণেতারা রাতভর পড়াশোনা করে এমন আইন বানাবেন যাতে জনগণের ওপর প্রযোজ্য বিধিনিষেধ থেকে তাঁরা মুক্ত থাকেন; কারো যাতে তাঁদের ঘাঁটানোর সাহস না হয়। ঘাঁটাঘাঁটি যা করার তাঁরা নিজেরাই করবেন। দেশে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার আগে অনুমতি নেওয়ার বিধান আছে। অভিজাত ব্যক্তিবর্গ ও তাঁদের পরিবারকে যাতে হেয় না করা যায় তেমন একটা আইন করে দিলেই সমস্যাটা চুকে যায়। জনগণও তখন তাদের সীমাটা বুঝে নিতে পারবে।
যখন ১ শতাংশ ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে তখন ৯৯ ভাগ হয়ে পড়ছে আরও গরিব, তখন ওই এক শতাংশ সামরিক–বেসামরিক আমলাতন্ত্র আর বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে নতুন শাসকশ্রেণি গঠন করে ফেলছে। এই ভিআইপি-অভিজাত-বেগমপাড়ামুখী শ্রেণিটিই তো সবকিছু হাতে নিয়ে বসে আছে। বৈষম্য বাড়া মানে তো সমাজ খাড়াখাড়িভাবে ধনি-গরিবে ভাগ হয়ে যাওয়া; মধ্যবিত্তে ওঠার সুযোগ, মধ্যবিত্ত থেকে আরও ওপরে ওঠার সুযোগ কমে যাওয়া। এমনটাই যদি চলতে থাকে তাহলে তো সামন্তবাদই কায়েম হচ্ছে বলতে হবে।
এ রকম অপমানজনক ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটছে। ঢাকার প্রভাবশালী নেতা হাজি সেলিম সাংসদকে আদালত হয়তো দশ বছরের কারাদণ্ড দিয়েই ফেলেছে। তাঁকে বলা হয়েছিল, রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এ আত্মসমর্পণ করতে হবে। এই সময়সীমার মধ্যেই তিনি গত ২ মে, ঈদের চাঁদ ওঠার দিন বিদেশে চলে যান। পরে এটা নিয়ে কিছু লোক হইচই করায় তাঁকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। এটাও ভালো হয়েছে। দেশে ফেরত আনা হয়েছে তো কী হয়েছে, জেলে তো পাঠানো হয়নি!
- ট্যাগ:
- মতামত
- ট্রেনের টিকিট