বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ডুবছে কেন
একটি দেশের প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে শিক্ষার ভিত্তি, মাধ্যমিক হচ্ছে তার শরীর আর উচ্চশিক্ষা হচ্ছে শিক্ষার মস্তিষ্ক। প্রাথমিক শিক্ষার কথা আমরা জানি যে, শিক্ষার্থীদের জন্য সেটি কোনো ভিত তৈরি করতে পারছে নাঅন্তত রাষ্ট্রপরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। মাধ্যমিক শিক্ষা এক মহা হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর উচ্চশিক্ষায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুয়েকটি অনন্য ব্যতিক্রম ছাড়া পড়াশোনায় আধুনিকতার ছাপ নেই। কিছু কিছু পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় ভাষা, ই-লার্নিং ও বৈশ্বিক শিক্ষার সাথে কিছুটা হলেও সামঞ্জস্য রেখে চলছিল, তবে গবেষণায় একেবারে পিছিয়ে আছে সবগুলোই। এ ছাড়া অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতির সাগরে তলিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই যদি এমন হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ বলে আর কী থাকল?
আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর সরকারিগুলোর কথা তো আমরা সবাই জানি যেটি নিয়ে আর কথা বলতে অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে অনেক আশা ছিল, কিন্তু সেটিও এখন আর বিশ্বস্ততার জায়গায় নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইনে ‘অলাভজনক’ হলেও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অর্থ আয়ের মেশিনে পরিণত হয়েছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি অলাভজনক কথাটা থাকা উচিত নয়। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবশ্যই কিছু উপার্জন করবে, তবে তার অর্থ এই নয় যে, অর্থ নিয়ে মহা লুটপাট চলবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো এখানেও রাজনীতি চলে এসেছে, আর ক্ষমতাবান ব্যক্তিরাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লাইলেন্স পাচ্ছেন, কাজেই এ ঘটনা ঘটারই কথা। সিন্ডিকেট-একাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে চলার কথা এসব প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিগত অফিসের মতো চালাচ্ছেন কেউ কেউ। এমন নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ২৫ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। কিছু অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আর কিছু সরাসরি ইউজিসিতে জমা পড়ে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে চিঠি পাওয়া গেছে। সেগুলো আমলে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৫টি বিশ^বিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটির তদন্ত প্রতিবেদন ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।