জনসাধারণকে ঘুম পাড়িয়ে বড় পরিবর্তন হয় না

দৈনিক আমাদের সময় আবুল কাসেম ফজলুল হক প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২২, ১৫:৩৪

আবুল কাসেম ফজলুল হক। শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক। তার রচনাগুলো স্বদেশভাবনা ও রাজনৈতিক চিন্তায় ঋদ্ধ। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আহমদ শরীফ চেয়ার অধ্যাপক। সম্প্রতি কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে শিক্ষককে লাঞ্ছনা, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, শিক্ষাব্যবস্থা, সুশাসন, গণতন্ত্র, রাজনীতি, শ্রীলংকার অবস্থা, নিত্যপণ্যের দাম ও দুর্নীতি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দৈনিক আমাদের সময়ের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রণজিৎ সরকার


আমাদের সময় : সম্প্রতি কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ম গ্রন্থ কিংবা ধর্ম বা ধর্ম প্রবর্তকের অবমাননার কথা বলে শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছে শিক্ষার্থীরা। এসব ঘটনা থেকে কি বোঝা যাচ্ছে যে, সামনে বাংলাদেশ বড় কোনো পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে কী?


আবুল কাসেম ফজলুল হক : বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ধর্মের নামে সব সময়ই বিরোধ ও বিতর্ক সৃষ্টি করে। কখনো কখনো এই বিরোধ রক্তক্ষয়ী রূপ নেয়। কারণ-কার্য সূত্র ধরে বুঝতে চেষ্টা করলে সমস্যার প্রকৃতি বোঝা যায়। ধর্ম কিংবা আদর্শ অবলম্বন না করে অধিকাংশ মানুষ চলতে পারে না। বাংলাদেশের ভূভাগে ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিক থেকে মানুষ গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের দিকে আগ্রহী ও অগ্রসর হচ্ছিল এবং বিজ্ঞানের প্রতি আস্থাশীল হয়ে চলছিল। স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ধর্মীয় রীতিনীতি ও প্রথা-পদ্ধতি থেকে সরে আসছিল। কিন্তু যখন মানুষ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করল যে, নেতৃত্ব গণতন্ত্র কিংবা সমাজতন্ত্র নিয়ে চলছে না- দুর্নীতি ও অনাচার বাড়ছে, তখন মানুষ অসহায় বোধ করতে থাকে এবং ধর্মের দিকে ফিরে যেতে থাকে। গণতন্ত্র কিংবা সমাজতন্ত্র পরিহার করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন মৌলবাদবিরোধী আন্দোলনে মত্ত হয়, তখন থেকে দেখা যায় ধর্ম ও পুরনো সংস্কার বিশ^াসের পুনরুজ্জীবন দ্রুততর হচ্ছে। এসবের পেছনে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী মহলেরও ভূমিকা আছে। বিবিসি রেডিও ও ভয়েস অব আমেরিকা আশি ও নব্বইয়ের দশকে ক্রমাগত উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে চতুরতার সঙ্গে সুকৌশলে ধর্মীয় মানসিকতা ও চিন্তাচেতনা জাগিয়ে তোলার জন্য প্রচারকার্য চালিয়েছে। বাবরি মসজিদ ভাঙার আগে ভয়েস অব আমেরিকা ভারতের মন্দির-মসজিদ বিরোধ সম্পর্কে চমৎকার ভাষায় চাঞ্চল্যকর যে প্রচারকার্য চালিয়েছিল, এর ফল কী হয়েছে? বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছে, রাম মন্দির নির্মিত হয়েছে, সর্বোপরি বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। বাংলাদেশে হিন্দু-মন্দির ও হিন্দু-বাড়ি লুট করা বেড়েছে, না কমেছে? এসব ঘটনার পেছনে বিবিসি রেডিও ও ভয়েস অব আমেরিকার ভূমিকা এবং পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিগুলোর অদৃশ্য ভূমিকা বোঝার চেষ্টা করা দরকার। পাকিস্তান কোনো ধর্মীয় রাষ্ট্র ছিল না। জিন্নাহর জীবন, জগৎ, দৃষ্টি ছিল সেক্যুলার। জওহরলালের জীবন, জগৎ, দৃষ্টিও ছিল সেক্যুলার। তাদের নেতৃত্বকালে জাতীয়তাবাদের (ঘধঃরড়হধষরংস) জায়গায় সাম্প্রদায়িকতা বাদ (ঈড়সসঁষধষরংস) অবলম্বন করে বাংলা ভাগ হয়, পাঞ্জাব ভাগ হয়, ভারত ভাগ হয় এবং পাকিস্তান ও ভারত- এ দুই রাষ্ট্র কায়েম হয়। পরে পাকিস্তান থেকে পূর্ব বাংলাকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ওইসব ঐতিহাসিক ঘটনার তথ্যভিত্তিক বিবরণ জাতির সামনে থাকা দরকার। মনগড়া বিবরণে ইতিহাস বিকৃত হয়। ইতিহাস বিকৃতির কুফল জনসাধারণকে ভোগ করতে হয়। এখন ধর্ম নিয়ে বিরোধ কমাতে পারলে এবং সর্বজনীন গণতন্ত্র সামনে আনতে পারলে সমস্যার সমাধান হবে। বাংলাদেশে বড় কোনো পরিবর্তন সাধনের চিন্তাভাবনা কিংবা আকাক্সক্ষা রাজনৈতিক মহলে নেই, বিশিষ্ট নাগরিকদদের মধ্যে নেই, ছাত্র-তরুণদের মধ্যেও নেই। জনসাধারণকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে কল্যাণকর বড় কোনো পরিবর্তন কী আশা করা যায়?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও