বিশ্বে শান্তি আসবে কীভাবে
সারা বিশ্বে এখন যে অশান্তির বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে, এর জন্য মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই দায়ী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নীতি-আদর্শ নেই। তাদের নীতি একটাই-কীভাবে টাকা ও সম্পদ লুণ্ঠন করা যায়। এ টাকা-সম্পদ লুণ্ঠন করতে গিয়ে তারা দেশে দেশে যুদ্ধ বাধাচ্ছে, অন্যায়ভাবে লাখ লাখ নিরীহ লোক হত্যা করছে। রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশ ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করতে গিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি এখন এতটাই ভয়ংকর হয়ে উঠেছে, আমেরিকার কূটকৌশলের কারণে যে কোনো সময় পৃথিবীতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। সারা পৃথিবীর মানুষ এখন আমেরিকার ক্ষমতার কাছে বন্দি হয়ে পড়েছে। এ বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমেরিকাকে শক্তিহীন করতে হবে। ধনে-সম্পদে-অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত আমেরিকাকে শক্তিহীন করতে না পারলে কখনোই পৃথিবীতে শান্তি আসবে না।
‘শক্তি’ চলমান স্রোতের মতো। এক জায়গায় শক্তি কখনো স্থির থাকে না। পৃথিবীতে অতীতে অনেক দেশই শক্তিমান হয়েছিল, আবার তাদের পতনও প্রত্যক্ষ করেছে পৃথিবীর মানুষ। একসময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এতটাই বিশাল ছিল, সেসময় বলা হতো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সূর্যাস্ত হয় না। কথাটি ঐতিহাসিকভাবে সেসময় ঠিক থাকলেও আজকের প্রেক্ষাপটে রূপকথার গল্পের মতোই শোনায়। যে ব্রিটিশ সরকার একসময় এত প্রতাপশালী ছিল, আজ তাদের শান্ত-ভদ্র মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই, ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর দেশে দেশে এ সাদা চামড়ার সুন্দর মুখের মানুষগুলো কী পরিমাণ অত্যাচার আর নির্যাতন করেছে।
আমেরিকা এমন একটি দেশ, যার নিজের দেশেই ঠিকমতো গণতন্ত্র নেই। অথচ সারা বিশ্বে সে গণতন্ত্র ফেরি করে বেড়ায়। তার দেশেও নির্বাচনে কারচুপি হয়, নির্বাচনে জনগণের রায়কে অস্বীকার করে সেখানে জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য পার্লামেন্ট ভবনে আক্রমণ করা হয়, ভাঙচুর ও শান্তিপ্রিয় লোকজন হতাহত করা হয়। যাদের দেশে নিজেরাই জনগণের ভোটের রায় মেনে নেয় না, তারা যখন অন্যদেশের সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে তির্যক মন্তব্য করে, তখন সেটা খুবই হাস্যকর শোনায়। কিন্তু তারা যেহেতু নিজেদের পৃথিবীর ‘মোড়ল’ বলে দাবি করে এবং যে কারণেই হোক পৃথিবী তা মেনে নিয়েছে, তাই যে কোনো দেশের যে কোনো বিষয়ে কথা বলা তাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে।
অন্যদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলা বন্ধ করা উচিত আমেরিকার। পৃথিবী এখন আর আগের জায়গায় নেই। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়নের ফলে প্রতিদিনই পৃথিবী পরিবর্তিত হচ্ছে। এ পরিবর্তন অনেক দেশকেই এনে দিয়েছে সমৃদ্ধি। এর ফলে আমেরিকার মতোই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে বিশ্বের আরও অনেক দেশ। তারা কিছুতেই নীতিহীন আমেরিকার কথায় ওঠবস করতে চাইছে না। সে কারণেই আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতা ও সম্পদলোভী আমেরিকা। তবে পরিস্থিতিদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সাবেক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো ও তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্ররা যদি কঠিনভাবে একবার আমেরিকাকে গলা চেপে ধরে, তাহলে তার বাঁচা কঠিন হয়ে পড়বে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিশ্ব শান্তি