শান্তিকামী মানুষের একান্ত প্রত্যাশা
এবার ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। একের পর এক রাষ্ট্রনায়ক ভারতে আসছেন। এবার ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে গুজরাটে নরেন্দ্র মোদির এলাকায় যাবেন। সেখানেই হবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর একান্ত বৈঠক। তারপর দিল্লি হয়ে তিনি ফিরে যাবেন। লন্ডনের প্রধানমন্ত্রী আসার আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির টেলিফোনের কথোপকথনও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এরই মধ্যে ওয়াশিংটন এবং ভারতের যে টু প্লাস টু বৈঠক, সেটাও কিন্তু শুধু প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে নয়, সামগ্রিকভাবে ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়, এই উপমহাদেশের কূটনীতিতেও বিশেষভাবে এটি প্রভাব ফেলেছে।
আমরা বারবার একটা বিষয়ে আলোচনা করে চলেছি, সেটা হচ্ছে যে ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে ভারত এবং বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে এই উপমহাদেশে এই মুহূর্তে কূটনীতির ক্ষেত্রে একটা নেতৃত্ব দিচ্ছে। ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার যে নতুন করে তৈরি হওয়া ঠাণ্ডা যুদ্ধ পুরনো ঠাণ্ডা যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এই বিরোধ আবার একটা নতুন ভারসাম্যের কূটনীতির জন্ম দিচ্ছে কি না, আবার একটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে পৃথিবী এগোচ্ছে কি না—এসব বিষয় নিয়ে নিরন্তর আলোচনা চলছে।
ইউক্রেন নিমিত্ত মাত্র। ইউক্রেনের ওপর পুতিনের যে হামলা, সেই হামলাকে কেন্দ্র করে একদিকে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো এবং ন্যাটোর সদস্যভুক্ত দেশগুলো। আর অন্যদিকে রাশিয়া এবং রাশিয়ার বন্ধু রাষ্ট্র, এমনকি তার মধ্যে চীনও এখন রয়েছে। এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারতের অবস্থান শেষ পর্যন্ত কী হবে? এই যে ভারত ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ কূটনীতিটা অবলম্বন করেছে, সেটা কি ঠিক করেছে? ভারতের কি উচিত আরো অনেক বেশি করে আমেরিকার পক্ষে এগিয়ে আসা? ভারত আমেরিকার সঙ্গে পুরোপুরি থাকছে না। রাশিয়ার ইউক্রেনকে আক্রমণ সমর্থন না করলেও যখন জাতিসংঘে এ বিষয়ে ভোটাভুটি হচ্ছিল তখন সরাসরি রাশিয়ার পক্ষে ভোট না দিলেও ভোটদান থেকে বিরত থাকাটা কিঞ্চিৎ রাশিয়ার দিকে একটা ‘টিল্ট’ বলে অনেক কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। রাশিয়ার দিকে এই ‘টিল্ট’ উচিত কি না তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। আমেরিকা এটাতে যে রুষ্ট, ভারতের এই অবস্থান যে পছন্দ করেনি—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
ভারতের এই অবস্থানের জন্য আমেরিকাও বাণিজ্যিকভাবে বা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারতকে চাপের মধ্যে ফেলতে চেষ্টা করতে পারে—এমন একটা ধারণাও কিন্তু ক্রমেই তৈরি হচ্ছে। আমেরিকার বেশ কিছু আচরণের মধ্যেও একটা ভারতবিরোধী অবস্থান পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেকে আশঙ্কা করছে, এর ফলে ভারতকে আমেরিকা ভবিষ্যতে কূটনৈতিকভাবে আরো বেশি করে ‘টাইট’ দেওয়ার চেষ্টা করবে কি না।