হাওরে বন্যা ও সময়ের এক ফোঁড়

সমকাল অধ্যাপক আব্দুল বায়েস প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২২, ১০:২০

অর্থনীতির অধ্যয়নে 'অনুন্নত' বলে একটা অভিধা আছে এবং অনুন্নয়নের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মোটামুটি সবাই অবগত আছি। সেই সূত্রে বাংলাদেশের পুরো হাওরাঞ্চল অনুন্নত এলাকা হিসেবে বিবেচিত, যেখানে গ্রামগুলো দু'দিক থেকে দুর্দশাগ্রস্ত থাকে। এরা বর্ষাকালে 'ওয়াটার লকড' আর শুস্ক মৌসুমে অনেকটা 'ল্যান্ড লকড'। যেখানে পায়ে হেঁটে উপজেলা সদরে যেতে দু-তিন ঘণ্টা আর নিকটতম বাজারে যেতে সময় লাগে এক থেকে দুই ঘণ্টা। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে অবস্থা কী দাঁড়ায় তা বোঝানো মুশকিল। পানি থাকে কিন্তু নৌকা চলার মতো নয়; রাস্তা থাকে ঠিকই তবে 'রথ' ও 'রথীর' জন্য সফর ভীষণ কষ্টকর। এমন একটা অনুন্নত এলাকা কিন্তু মনে হতে পারে গোবরে পদ্মফুল, হাসন রাজা, শাহ্‌ আবদুল করিম এবং রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থ বাংলাদেশের ক্ষণজন্মা এই তিন গীতিকার, গায়ক এবং দার্শনিকের জন্ম ওখানেই। হাওরাঞ্চলে ভরা বর্ষায় অঝোরে বৃষ্টি নামলে উকিল মুন্সী রচিত এবং বারী সিদ্দিকীর কণ্ঠে গাওয়া গানটির কথা বেশ মনে পড়ে- আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানিরে/ পুবালি বাতাসে/ বাদাম দ্যাইখা চাইয়া থাকি/ আমার নি কেউ আসেরে...।


বর্ষাকালে হাওরের গ্রাম যেন একটা দ্বীপ। বিস্তৃত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে কিছু গাছ এবং ঘরবাড়ি পানিতে ভাসছে। কয়েকটা ঘর ও বাড়ি মিলে একটা 'গুচ্ছ' যাকে স্থানীয় ভাষায় বলে 'হাটি'। হাওরে জীবন-জীবিকা মূলত কৃষিকেন্দ্রিক, যেখানে ধান আর মাছ বিপুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনা নিয়ে চাষ করা হয়ে থাকে। বিশেষত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাওর তথা অথই পানির অর্থনীতি মাছকেন্দ্রিক। একটা মাছের আড়ত থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার মাছ মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ হয়ে ঢাকায় চলে যায়। পাঁচ-সাত বছর আগেও এক কেজি মাছের দামে প্রায় ছয় কেজি মাছ পাওয়া যেত। ঢাকার বাজারে এক কেজি ট্যাংরা ও মলা মাছ ৪০০ টাকা হলে হাওরের তুলনায় পার্থক্য প্রায় তিন গুণ বা ৩০০ টাকা। তার মানে ফড়িয়া পায় ৭৫ ভাগ আর চাষি পায় ২৫ ভাগ। যা হোক, হাওরের মাছ এখন ঢাকাগামী প্রান্তিক প্রাপ্তির বিনিময়ে। মানুষের আয় এবং সচেতনতা যত বাড়বে হাওরের মাছের চাহিদা তত বাড়বে বলে বিশ্বাস।


থাক সে কথা। হাওরাঞ্চলে সাধারণত একটা ফসল হয়। বাংলাদেশে মোট চাল উৎপাদনের জমির পরিমাণ প্রায় সোয়া কোটি হেক্টর, যার মধ্যে প্রায় ২০ লাখ হেক্টর বা ১৫ শতাংশ হাওরাঞ্চলে। এক অর্থে দেশের মোট চাল উৎপাদনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আসে ওখান থেকে। হাওরাঞ্চলের কৃষকের অন্যতম ঝুঁকি পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যা- যা মাঝেমধ্যে সর্বস্বান্ত করে তা প্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে দূর করা অনেকাংশেই সম্ভব। মনে থাকার কথা, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতে উজানে থাকা ভারতীয় এলাকায় ভারী বর্ষণবাহিত চকিত বন্যা বা 'ফ্লাশ ফ্লাড' কী ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। ফসল কাটার দিনক্ষণে আগাম বন্যার আগমনে মাঠে থাকা ফসল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে কৃষকের নাভিশ্বাস এবং খাদ্য নিরাপত্তার হুমকিতে পতিত ছিল পুরো হাওরবাসী। এ ধরনের আগাম বা চকিত বন্যা দু'দিক থেকে ক্ষতি করে- বন্যার সময় ফসল এবং যোগাযোগ বিধ্বস্ত করে এবং বন্যা-পরবর্তী নানা জটিলতা ও দুর্ভোগ বাড়ায় বই কমায় না। ২০১৭ সালে দুর্ভোগের জন্য দায়ী বহুল আলোচিত কারণের মধ্যে ছিল যেনতেন প্রকারে বাঁধ নির্মাণ, অপরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ, বাঁধ কেটে দেওয়া এবং ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের ব্যাপক দুর্নীতি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও