উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের বেশকিছু ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। এর ফলে হাওড়ের বিপুল পরিমাণ বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এ আগাম বন্যার কারণে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির বিষয়টি ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।
মঙ্গলবার যুগান্তরে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালে হাওড়ে বিপর্যয়ের পর ৫ অর্থবছরে ফসল রক্ষায় সরকার ৫৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু এ অর্থ ব্যয়ে যথাযথভাবে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার হয়নি। বাঁধ ঘিরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নকশা আগাম বন্যা রোধে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। পাউবোর গোপন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার ১৬৮টি বাঁধের ২৩৬টি স্থানে ত্রুটি ধরা পড়েছে। এসব ত্রুটি নকশাবহির্ভূত বাঁধ নির্মাণের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা গোটা হাওড় অঞ্চলের জন্য এখন অশনিসংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে। বস্তুত দুর্নীতির কারণে সুনামগঞ্জে নকশা অনুযায়ী কোনো বাঁধেরই কাজ হয়নি। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
বাঁধ নির্মাণে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। অভিযোগ আছে, হাওড় রক্ষা বাঁধের নামে শুরু থেকেই অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে অপচয় ও দুর্নীতির সুযোগ থাকে বেশি। বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি ও দুর্নীতি হলে স্থানীয় জনগণকে এর কতটা মাশুল দিতে হয় তার প্রমাণ ২০১৭ সালের এপ্রিলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে হাওড়ের বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে ব্যাপক ফসলহানির ঘটনা। সেসময় তাহিরপুরের শনির হাওড় রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড পাঁচটি প্যাকেজ বাঁধ নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করলেও কাজ পাওয়া ঠিকাদাররা ১০ থেকে ১৫ ভাগের বেশি কাজ করেনি। এ কারণে আকস্মিক বন্যায় ফসল ডুবেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন হাওড়টির ধানের ওপর সারা বছরের জীবিকা নির্বাহকারী হাজার হাজার কৃষক। এবারও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- হাওরাঞ্চল
- উজানের ঢল
- বাঁধ নির্মাণ