ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ভরকেন্দ্রের পরিবর্তন!
ইউক্রেনে আক্রমণের ছয় সপ্তাহ চলে গেলেও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে মনে হচ্ছে রাশিয়ার যুদ্ধের ‘সেন্টার অব গ্রেভেটি’ বা ‘ভরকেন্দ্র’-এর পরিবর্তন ঘটেছে। ১০ এপ্রিল মস্কোর এক মহাকাশ কেন্দ্রে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের রুশ ভাষাভাষী মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই রাশিয়ার প্রধানতম লক্ষ্য। রাশিয়ার এক সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাও বলেছেন, ‘এখন তাদের বাহিনীর মূল লক্ষ্য হবে ডনবাসের পুরোপুরি স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। অর্থাৎ লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। এতদিন জেনে এসেছি ডনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া ছিল রাশিয়ার অন্যতম লক্ষ্য, তবে প্রধানতম নয়। তাদের সেই অন্যতম লক্ষ্য যখন প্রধানতম লক্ষ্যে পরিবর্তন হয়েছে তখন স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার যুদ্ধের ভরকেন্দ্রেরও পরিবর্তন ঘটেছে।
আক্রমণের পর গত ছয় সপ্তাহের যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে যুদ্ধবিশারদরা ধারণা করেছিলেন, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখল করে সেখানে মস্কোপন্থি সরকার বসিয়ে শাসনব্যবস্থা কায়েম করাই ছিল রাশিয়ার এ যুদ্ধের ‘সেন্টার অব গ্রেভেটি।’ উল্লেখ্য, যে কোনো বড় যুদ্ধে আক্রমণকারীরা আগে থেকেই তাদের মূল লক্ষ্য অর্জনে ‘সেন্টার অব গ্রেভেটি’ নির্ধারণ করেই যুদ্ধ পরিচালনা করে থাকে। যুদ্ধের সেন্টার অব গ্রেভেটি পরিবর্তন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। মেইন অবজেক্টিভ বা মূল লক্ষ্য অর্জন করার অভিপ্রায় ঠিক রেখে সেন্টার অব গ্রেভেটির পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং তা যুদ্ধের রণকৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশও বটে। তবে এ যুদ্ধে রাশিয়া তাদের মূল লক্ষ্য কী, তা সরাসরি পরিষ্কার করেনি। বিভিন্ন মিডিয়া বা তথ্য বিশ্লেষণে তাদের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে যা কিছু শোনা যায় তা অনেকটাই অনুমাননির্ভর। প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়া পূর্বাঞ্চলে শক্তিবৃদ্ধি করে ডনবাস অঞ্চল দখল করে তাদের মূল লক্ষ্য বা আসল উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারবে কি?
পশ্চিমানির্ভর বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এ পর্যন্ত ইউক্রেনের তুলনায় রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের ক্ষতি হয়েছে বেশি। সামরিক বিষয়াদি নিয়ে কাজ করে এমন একটি পশ্চিমা ওয়েবসাইট ‘অরিক্স’-তাদের এক বিশ্লেষণে হিসাব করে দেখিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ৪০০টির অধিক ব্যাটেল ট্যাংক ধ্বংস হয়েছে। এছাড়াও ২০টি যুদ্ধবিমান ও ৩২টি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে। শত শত যুদ্ধযান ও অন্যান্য যুদ্ধের সরঞ্জাম অকেজো হয়ে গেছে। তবে এসব তথ্যের সঠিকতা নিয়ে সন্দেহ আছে বলে অনেক যুদ্ধবিশেষজ্ঞ মতপ্রকাশ করেছেন।
যুদ্ধক্ষেত্রে নিজ পক্ষের সেনাদের মনোবল উঁচু রাখতে এবং বিরোধীপক্ষের সেনা সদস্যদের মনোবল দুর্বল করার জন্য এমন প্রপাগান্ডা পরিচালিত করা যুদ্ধেরই একটি অংশ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। পশ্চিমা মিডিয়া সেই কাজটি করছে কি না, তা বিবেচনা করার প্রয়োজন আছে। অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, যুদ্ধকালীন পশ্চিমা বিশ্বের প্রপাগান্ডা মেশিন বেশি সক্রিয় থাকে। ইতঃপূর্বে কুয়েত দখল করার পর ‘অপারেশন ডেজার্ট হান্ট’ ও আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় পশ্চিমা বিশ্বকে এমন প্রপাগান্ডা করতে আমরা দেখেছি। এ কথা সত্য, যে পরিসংখ্যান ওপরে দেখানো হয়েছে তা যদি সঠিক হয়, তাহলে পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধে এর প্রভাব পড়বে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে এসব ঘাটতি পূরণ করার সক্ষমতা রাশিয়ার আছে। রাশিয়ার উৎপাদন ক্ষমতা আছে বলে অস্ত্র ধ্বংস হলেও তা পূরণ করতে সমস্যা হবে না।