স্পষ্ট কথা বলতে একপা পেছাতেন না কবরী : আলমগীর
কবরীর দুটি দিক। প্রথমত, তিনি একজন অসাধারণ অভিনেত্রী আর দ্বিতীয়ত, অসাধারণ একজন মানুষ। অভিনেত্রী কবরী সম্পর্কে বলা আমার ধৃষ্টতার মধ্যে পড়ে। তিনি যতটা বড় মাপের অভিনয়শিল্পী, ওটার আশপাশেও আমরা নেই। তাই তাঁর অভিনয় নিয়ে কথা বলার ধৃষ্টতা দেখাব না কোনো দিনই। তবে এটা বলতে দ্বিধা নেই, মানুষ হিসেবে অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। স্পষ্টভাষী মানুষ ছিলেন, স্পষ্ট কথা বলতে একপা পেছাতেন না।
খুব কেয়ারিং ছিলেন আমাদের প্রতি। খুবই স্নেহ করতেন। ভালোবাসতেন। সেই আগেকার দিনে যখন প্রথম নায়ক হয়ে এসেছি, তখন আমাদের যখন এক পয়সারও মূল্য নেই মার্কেটে বা প্রোডাকশন ম্যানেজার বা প্রডিউসারদের কাছে—তখন তিনিই কিন্তু আমাদের পাশে দাঁড়াতেন। আমার জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র ‘আমার জন্মভূমি’তে তিনি নায়িকা ছিলেন, কিন্তু আমার বিপরীতে নন, রাজ্জাক ভাইয়ের বিপরীতে। মাহফুজুর রহমান (চিত্রগ্রাহক) ছিলেন, মিনু রহমানও ছিলেন। আমার সঙ্গে সেই ছবিতে কোনো নায়িকাই ছিলেন না। আমি একটা খ্যাপা চরিত্রে অভিনয় করেছি, মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে।
একটা ছোট্ট ঘটনা সবার সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। ‘আমার জন্মভূমি’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে যখন আউটডোরে গেছি কুমিল্লায়, কোথায় থাকব না থাকব, তা ভেবে তো কারও কোনো কিছু যাবে আসবে না। আমি কে, আমার কী আছে, কোথা থেকে আসছি, লেখাপড়া কত দূর—ওসবের কিন্তু কোনো মূল্য নেই ওখানে। চলচ্চিত্রে মূল্যটা হচ্ছে, কত ভালো অভিনেতা আপনি। কী কাজ করছি, সেটার মূল্য আছে। থাকার জায়গার অভাবে শুটিংবাড়িতে আমাকে আর মাহফুজকে বড় বারান্দা ছিল, খড় বিছিয়ে চাদর গায়ে দিয়ে থাকতে হয়েছে সেখানে। পরদিন এটা আবার কবরী দেখে ফেলেন। তিনি দেখার পর প্রোডাকশন ম্যানেজারকে ডেকে, নিজে টাকা দিয়ে চৌকি কিনে এনে দুটি তোশক দিয়ে, দুটি বালিশ এনে দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। তখনকার সেই কবরীকে নিয়ে আসলে কী বলব! আমি মাত্র এসেছি চলচ্চিত্রে, দু–চার দিন শুটিং করেছি—এসব তো ভুলিনি, ভুলব না কোনো দিন।