শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফেরানো বড় চ্যালেঞ্জ
করোনার দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও অনেক শিক্ষার্থীই আর স্কুলে ফিরছে না। মাধ্যমিকে নবম এবং প্রাথমিকে চতুর্থ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি সবচেয়ে কম। মাধ্যমিকে গড় উপস্থিতির হার ৫৭ থেকে ৬৯ শতাংশ এবং প্রাথমিকে ৬৫ থেকে ৮৬ শতাংশ। অর্থাৎ শ্রেণিভেদে মাধ্যমিকে ৪৩ থেকে ৩১ শতাংশ এবং প্রাথমিকে ৩৫ থেকে ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী করোনার পর শ্রেণিকক্ষে আসছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের উপস্থিতি কম।
ব্র্যাক, সেভ দ্য চিলড্রেন, ওয়ার্ল্ড ভিশন, ব্রিটিশ কাউন্সিল, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, রুম টু রিডসহ ২১টি প্রতিষ্ঠানের ‘নিরাপদে স্কুলে ফিরি’ শীর্ষক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
গবেষণায় শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির প্রধান পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো—শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া, বাল্যবিবাহ, পরিবারের অন্য জায়গায় স্থানান্তর, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে কওমি মাদরাসায় স্থানান্তর এবং অধ্যয়নে আগ্রহ হ্রাস।
জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের করোনার ক্ষতি পোষানোর একটি পরিকল্পনা দরকার। পরীক্ষা ছাড়াই উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শ্রেণিতে পড়াশোনা শুরু করেছে। কিন্তু এ জন্য তারা প্রস্তুত কি না, তা দেখা হয়নি। পড়ালেখা শুরুর আগে শিখন যোগ্যতা যাচাই করা দরকার ছিল। অন্তত দুই বছরের একটা পরিকল্পনা দরকার ছিল। এর কিছুই হয়নি। ’
ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে মনজুর আহমদ বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে শিক্ষা কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার ও এনজিও প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ করা যেতে পারে। তারা ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে স্কুলে ফিরিয়ে আনবে। এ জন্য অবশ্যই বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। ’
গত ১৩ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সাতটি বিভাগের ১৭টি জেলার ৩২৮টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থীর ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়। নমুনা স্কুলের মধ্যে গ্রামীণ-শহুরে স্কুলের অনুপাত ছিল ৭৬ঃ২৪; প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনুপাত ছিল ৫৫ঃ৪৫। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত ছিল ৪০ঃ৬০। কভিড-১৯ সংক্রমণ কমে আসার প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলার পরে স্কুলে উপস্থিতির মূল্যায়ন করাই ছিল গবেষণার উদ্দেশ্য।
করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দীর্ঘ ১৮ মাস পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে গত ২১ জানুয়ারি আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরে মাধ্যমিক ও তদূর্ধ্ব প্রতিষ্ঠান ২২ ফেব্রুয়ারি আর প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ মার্চ খোলা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কুল খোলার পরে সমীক্ষা চলাকালীন তিন সপ্তাহে সর্বনিম্ন উপস্থিতি ছিল চতুর্থ শ্রেণিতে (৬৫ শতাংশ) এবং সর্বোচ্চ প্রথম শ্রেণিতে (৮৬ শতাংশ)। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সর্বনিম্ন উপস্থিতি ছিল নবম শ্রেণিতে (৫৭ শতাংশ) এবং সর্বোচ্চ ছিল ষষ্ঠ শ্রেণিতে (৬৯ শতাংশ)। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের উপস্থিতির হার বেশি ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে ছেলেরা ১৬ থেকে ৩৭ শতাংশ এবং মেয়েরা ১৪ থেকে ৩৫ শতাংশ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছেলেরা ৩৪ থেকে ৪৫ শতাংশ এবং মেয়েরা ২৮ থেকে ৪১ শতাংশ অনুপস্থিত ছিল। নবম শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের উপস্থিতি কমেছে। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তুলনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশি ছিল।