রোকেয়ার জন্মদিনেই হোক টিপ উৎসব

সমকাল দাউদ হায়দার প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২২, ১১:০৯

'রাজার পাপে রাজ্য নষ্ট'- রামের আমল থেকে বহুল প্রচলিত প্রবাদ। কালে-কালে। বর্তমানেও। চাণক্য বলেছেন, শিবের মতো রাজারও ত্রিনয়ন থাকা জরুরি। দুই নয়নে না দেখলেও কপালের আঁখি সব দেখবে। এই চোখই হবে জাগতিক। ভালো-মন্দ, তস্কর, সাধু কিছুই এড়াবে না। রাজা যখন প্রজার দায় নিয়েছেন; নষ্ট প্রজার কুকর্মও এড়াতে পারেন না।


ঠিক যে, কোনো সৎ রাজা (একালে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী) প্রজাকে কুমন্ত্র, অসৎ পরামর্শ দেন না। আশা করেন, প্রজা সাধু হবেন; বিধি মানবেন। প্রয়োজনে তিনিও প্রজার পরামর্শ চান। একেই বোধ হয় জাতক-এ বলা হয়েছে, 'সমতলে'। রাজা-প্রজার আসন ভূমিতে, একাত্ম, সম্পর্কিত। এখন অবশ্য আকাশ-পাতাল তফাৎ। প্রজার নাগাল ধরাছোঁয়ার বাইরে। রবীন্দ্রনাথের 'রক্তকরবী' মনে পড়ে? নন্দিনীর কথা? বিশু, কাগুলালরা কেবলই নাম্বার তথা সংখ্যায় উল্লেখ। রাজার সান্নিধ্য দূর অস্ত। একালের রাজা গদিতে একবার আসীন হলে এক হাতে চাঁদ-সূর্য দুই-ই ধারণ করেন, আরেক হাতে দণ্ড। এবং এই দণ্ড লিখিত সংবিধান। সংবিধানের দোহাই দিয়ে ভবতরী পার হওয়ার কসরৎ। তিন বানরের কেচ্ছা। চোখ, কান, মুখ বন্ধ। দেখবে না। শুনবে না। বলবে না। অতঃপর? যা হওয়ার হবে। গোল্লায় যাক ধরণি। আমি বাঁচলে বাপ-দাদার নাম। না বাঁচলে লেংটিরও খোঁজ রাখবে না।


তার মানে, কিছু দেখব না, শুনব না। না দেখা, না শোনা, না বলায় কী ভয়ংকর আশকারা পেয়েছে কেউ কেউ! কোনো প্রশাসন, জ্যান্ত প্রমাণ কপালে টিপ পরায় অধ্যাপিকা লতা সমদ্দারকে যাচ্ছেতাই অপমান। হেনস্তা। করেছে পুলিশ বাহিনীর এক পুলিশ। কোত্থেকে এই স্পর্ধা, সাহস, বুকের পাটা, হিম্মত? গোড়ায় গলদ। বলা হয়, পুলিশ রাষ্ট্রের সেবক। সেবককে যথাযথ ট্রেনিং দেওয়া হয়নি। ভব্যতা, সভ্যতা, আচরণ শেখানো হয়নি। উল্টো অভদ্র করা হয়েছে। অশালীন কথা বলার মুরব্বি বানিয়েছে।
আমাদের বিলাভ্‌ড্‌ বাপজান শেখ মোহাম্মদ হাকিমউদ্দীন অতিশয় বুদ্ধিমান। চতুরও বলা যায়। ব্রিটিশ আমলে জমিদার। পাবনা শহরে চোখ ধাঁধানো দুটি বিশাল বাড়ি। উত্তরোত্তর ট্যাক্স বৃদ্ধি। ঠিক করেন, গ্রামে আস্তানা গাড়বেন। বিরাট বাগান, বিরাট পুকুরসহ বাড়ি। সেই সময় গ্রামের বাড়ি, জমিতে যৎসামান্য ট্যাক্স। দোহারপাড়া থেকে শহর এক ফার্লংও নয়। অনেকটাই শহরের অংশ। কিন্তু শহরের চৌহদ্দিতে নয়। দোহারপাড়া, আরিফপুরের সব রিকশা শহরমুখী। আমাদের লেখাপড়া, স্কুল-কলেজ শহরে। মায় বাজার-সওদাও। হেঁটেই যাতায়াত।


আমাদের আত্মীয়া, পাড়াতুতো বোন রিকশায় শহরে যান, কপালে টিপ। হিজাব ছাড়াই। বিক্রেতা কিংবা পথচারী মোল্লা-হাজিও। টিপ নিয়ে প্রশ্ন করেননি। ভ্রু কোঁচকাননি। মুখ বেঁকিয়ে তাচ্ছিল্য করেননি। কুকথা বলেননি। মনে পড়েছে, এক আত্মীয়ার সঙ্গে শহরে গিয়েছি। তিনি শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট কী কী সব কিনবেন। তার মাথায় হিজাব নেই। খোলা চুল পিঠ অবধি। কপালে লাল রঙের বড় টিপ। এক দাড়িঅলা মোল্লা, মাথায় টুপি, বয়স সত্তরের কম নয়, আত্মীয়াকে দেখে বললেন, 'তোমার টিপ চাঁদের চেয়েও সুন্দর।'


এই সৌন্দর্য বঙ্গীয় রমণীর। আদি ঐতিহ্য সংস্কৃতি। হিন্দু-মুসলিম বালাই নেই। বাঙালির বিয়ের সাজ কি হিন্দুর? পোশাক? কোনো নারী কি হিজাব, বোরখা পরে বিয়ে করে? স্বামী কি হিজাব পরা, বোরখা পরা নারীকে দেখে? মুখ দেখে না? না দেখে পছন্দ, বিয়ে? এথনিক কালচার (তথা দেশীয় আদি সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ছাড়া কোনো জনগোষ্ঠী আছে পৃথিবীতে?) এথনিক কালচারের সঙ্গে ধর্মের বিরোধ বাধলে সমূহ বিপর্যয়। রাষ্ট্রকর্তারাও জানেন। জেনে চুপ। ধর্মীয় ফতোয়াবাজদের দমন করেন কৌশলে।
মুসলিম দেশ মিসর, মরক্কো, তিউনিসিয়ায় বন্ধুদের বোন বা আত্মীয়ার বিয়েতে দেখেছি, বাংলাদেশের মোল্লাদের ফতোয়ায় রীতিমতন 'অনৈসলামিক' (নন-ইসলাম) ব্যাপার-স্যাপার। তরুণী/যুবতীরা টিপ পরছে। হাতে কাচের চুড়ি। নাকে নাকছাবি। বোরখা তো নেই-ই, হিজাবও। বিয়ের আসরে উদ্দাম স্ম্ফূর্তি। বেলি ড্যান্স। গানবাজনা। রং ছিটানো। এমনকি উলুধ্বনি। সবই এথনিক কালচার।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও