একজন হৃদয় মণ্ডল
গোপনে শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোন নিয়ে শিক্ষকের আলাপচারিতা রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়া হলো, তার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলা হলো, ২২ বছর ধরে সুনামের সাথে বিজ্ঞান পড়ানো শিক্ষককে জেলে ভরে দেয়া হলো।
এটাই একখণ্ড বাংলাদেশ এখন। মুন্সিগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল আসলে অন্ধের দেশে চশমা বিক্রি করেছেন সারাজীবন। ভুলে ভরা জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল ছিল অজ্ঞানতার অন্ধকারে থাকা এক সমাজে বিজ্ঞান তথা আলোর কথা বলা। হৃদয়হীন সমাজে হৃদয় উজাড় করে তিনি জ্ঞান বিতরণ করতে চেয়েছিলেন।
তেজগাঁও কলেজের নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষিকা লতা সমাদ্দারের টিপ নিয়ে এক পুলিশ সদস্যের অসদাচরণকে ঘিরে দেশ যখন উত্তাল তার আগে থেকেই হৃদয় মন্ডলকে ফাঁসাতে পেরে উদ্বেলিত ছিল তার ছাত্ররা। হৃদয় মন্ডল ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরবেন বলে তার স্ত্রী আর সন্তানেরা যখন অপেক্ষা করছিল, তখন তারা জানল প্রিয় মানুষটি পুলিশি হেফাজতে এবং তারা নিজেরাও নিরাপদ নয়। বাড়ি এসে এই ধার্মিক ছাত্ররা খিস্তি খেউড় করে সদর্পে ফিরে গেছে।
এতটুকু ছেলেরা এতটা সাম্প্রদায়িক কী করে হয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে শুধু এটুকু বলা যায় খুব গভীর থেকে বাংলাদেশে তালিবানিকরণের প্রচেষ্টা চলছে। খুব ছোট ছোট শিশুরা এখন হিন্দু মুসলমান বিভাজন করতে শিখে গেছে। কারও প্রতি অন্যায় হলে হিন্দু শব্দটিও লেখা হয় না। লিখতে হয় সংখ্যালঘু।
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার ইতিহাস সুপ্রাচীন। কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা হলো শিক্ষিত সমাজের সাম্প্রদায়িকতা। তারা যে কোন প্রকারে দুর্গাপূজায় হামলার যৌক্তিকতা খুঁজে পায়, কিছু না পারলে বলবে ভারতেও তো মুসলিমরা নির্যাতিত হয়, যেন ওখানে হয় বলে সেই কাজ এখানেও জায়েজ।
এরা নিজের সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমে বৃটিশ আর কানাডিয় কারিকুলাম পড়ায়, কিন্তু ফেসবুকে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসারে শোরগোল করে। এরা নিজেরা ধর্মের কোন আচরণই ঠিকমতো চর্চা করেনা, কিন্তু স্বাধীনতার কথা বলে সাধারণ নারীর সাধারণ পোশাক নিয়ে নিয়মিত কটূক্তি করে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সাম্প্রদায়িকতা