মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়াতে গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ বাড়াতে হবে
ড. নজরুল ইসলাম জাতিসংঘের উন্নয়ন গবেষণাপ্রধান। তিনি অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট এবং রাশিয়ার মস্কো রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়, কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয় ও সেন্ট জোন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। ২০০৬ সালে জাতিসংঘে যোগ দেন। বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় তিনি সক্রিয়। এ লক্ষ্যে তিনি ১৯৯৮ সালে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক—বেন’ এবং ২০০০ সালে ‘বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন। উন্নয়ন, বৈষম্য, পরিবেশ সংরক্ষণ, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মানোন্নয়ন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা
৫০ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ প্রভূত অগ্রগতি অর্জন করেছে। সবাই জানি, একাত্তরের আগে আমাদের দেশ বরাবরই বৈদেশিক শোষণ-শাসনের মধ্যে ছিল। এখানে যে উদ্বৃত্ত সৃষ্টি হতো, সেটি কখনো এ দেশে বিনিয়োজিত হতে পারেনি। কাজেই পুঁজিভবনের প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশে আগে খুব একটা হয়নি। সুতরাং একাত্তর সালে স্বাধীনতা লাভের পর একটা নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, নতুন একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ কারণে আমাদের দেশে পুঁজিভবনের প্রক্রিয়াটি অগ্রসর হয়েছে। সারা দেশের দিকে তাকালেই বিষয়টি দেখা যায়। অবকাঠামোর ক্ষেত্রেও দেখা যায়, প্রাইভেট হাউজিংয়ের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। এখন নির্মাণ শিল্পের বিপ্লব চলছে। এটা পুঁজিভবনের বহিঃপ্রকাশ। এটা সুনির্দিষ্ট একটা রূপ। তার সঙ্গে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস, বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রে যেমন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। এটা স্বীকার করি। কিন্তু ইংরেজিতে একটা কথা আছে—‘তুমি যা অর্জন করেছ কিংবা মেডেল পেয়েছ, সেটি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না।’ নতুন সময়ের জন্য নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়, নতুন চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হয়। সেগুলো কীভাবে অতিক্রম করা যাবে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এটা নিরন্তর একটা প্রক্রিয়া। ইতিহাস এক জায়গায় স্থির থাকে না। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এখন যা প্রয়োজন তা হলো, বর্তমানে যেসব চ্যালেঞ্জ আবির্ভূত হয়েছে, সেগুলো সঠিকভাবে নির্ণয় ও বিশ্লেষণ করা এবং এগুলো কীভাবে সমাধান করা যাবে এবং কী ধারায় এগিয়ে যেতে হবে তা ঠিক করা। এটিই মনে হয় এখানকার বড় চ্যালেঞ্জ।
বর্তমানের একটি চ্যালেঞ্জ হলো বৈষম্য। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকারের পক্ষ থেকে বৈষম্যের বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। বৈষম্য যে একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ এবং সেটিকে মোকাবেলা করতে হবে, এর স্বীকৃতিও সেখানে আছে। উন্নয়ন হয়েছে, পাশাপাশি বৈষম্যও বেড়েছে। তার প্রমাণ হিসেবে আমরা দেখি আয় বিতরণের জিনি সহগ বেড়েছে। আগে জিনি সহগ দশমিক ২৫-২৬ শতাংশ ছিল। সেটি এখন দশমিক ৪০ শতাংশের ওপরে উন্নীত হয়েছে। আয় অসমতার পরিমাপক হিসেবে জিনি সহগের কিছু দুর্বলতা আছে। সেজন্য পালমা অনুপাতের কথা বলা হয়। এ অনুপাতের বিচারেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।