অর্থনীতির চার সূচকে বিপৎসংকেত
সুকুমার রায়ের আবোল–তাবোলের সেই ছড়াটির কথা মনে আছে। অর্থনীতি কিন্তু এখন সেই ছড়ার মতো ‘ভালোরে ভালো সকল ভালো’ অবস্থায় নেই। অন্তত চারটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক সতর্কসংকেত দিচ্ছে। কোভিড-১৯–এর সংক্রমণ দুই বছর পরে কমলেও তারপর শুরু হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। ফলে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা আছে, এমন প্রায় সব ক্ষেত্রেই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কোভিডের সময় সারা বিশ্বেই চাহিদা ছিল কম। এতে উৎপাদনও কম হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থাও বিঘ্নিত হয়। কোভিডের প্রভাব চলে যেতে থাকলে চাহিদা বাড়ে। কিন্তু সে তুলনায় উৎপাদন বাড়েনি। ফলে শুরু থেকেই দেখা দেয় মূল্যস্ফীতির চাপ। বাংলাদেশও এই বাইরে থাকতে পারেনি। এরপরই রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ। এতে আরও বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে।
মূল্যস্ফীতির চাপ বাংলাদেশেও আছে। স্বস্তির জায়গা এখনো রপ্তানি আয়। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন আমদানির ক্ষেত্রে। আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এতে আমদানির পরিমাণ যতটা বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে এর ব্যয়। ফলে রপ্তানি আয় বাড়লেও সে তুলনায় আমদানি ব্যয় এতটাই বেড়েছে যে বাণিজ্য ঘাটতি হয়ে গেছে বিশাল। অন্যদিকে করোনার সময় প্রবাসী আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশে ছিল বরাবরই ভালো প্রবৃদ্ধি। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই এই আয় নিম্নগামী। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বৈদেশিক প্রায় সব ক্ষেত্রেই আয় কমে গেছে, অথচ বেড়েছে ব্যয়। এতে চলতি হিসেবে বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। ভারসাম্যহীনতা আছে সামগ্রিক লেনদেনেও।
আমদানি ব্যয়
এখন পর্যন্ত চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের আমদানি ব্যয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৪৪ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। আমদানি ব্যয়ের এই পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশে এর আগে পুরো এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ আমদানি ব্যয় হয়েছিল ৬ হাজার ৫৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার—গত অর্থবছরেই। কিন্তু বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে আমদানি ব্যয় দাঁড়াবে ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি ডলারে। বাংলাদেশের পক্ষে এই আমদানি ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা বেশি দিন আর হাতে থাকবে না।