বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ফিরিয়ে দিন
আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সরাসরি স্খলন শুরু হয় ১৯৯০-এর সময় থেকে। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর থেকে স্খলনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ক্ষমতার রাজনীতি এসময় থেকে নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য টার্গেট করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। দীর্ঘ ইতিহাসজুড়ে যে তারুণ্য শক্তি সত্য-ন্যায় ও দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত ছিল, তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে লাভ-লোভের আবর্তে ফেলে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের আজ্ঞাবহতে পরিণত করতে থাকে।
অর্থ আর অস্ত্রশক্তি হাতে তুলে দিয়ে উন্মত্ত মাস্তানে পরিণত করতে লাগল ছাত্রদের। এতে অনেক মেধাবী তরুণ তলিয়ে যেতে লাগল অন্ধকারে। আর সচেতন মেধাবী শিক্ষার্থীরা কলুষিত হয়ে পরা রাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিলেন। ফলে ছাত্ররাজনীতির নামাবরণে মাস্তানতন্ত্রই প্রতিষ্ঠিত হতে লাগল ক্যাম্পাসে।
এসবে শতভাগ হতাশ হইনি আমরা। ইতিহাসের এ শিক্ষাটি আমাদের মনে আশা জাগিয়েছিল যে, জাতির বড় সংকটে ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ হবেই। এর প্রমাণ পেয়েছিলাম ১৯৯০-এ। ছাত্ররা গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, প্রত্যাশা ছিল যে, এই আন্দোলনের পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় দেশপ্রেমের শক্তি নিয়ে কালিমাময় পোশাক গা থেকে খুলে ক্যাম্পাসকে আবার আপন ঔজ্জ্বল্যে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবেন আমাদের রাজনীতি অঞ্চলের বিধায়করা। বাস্তবে তা হলো না। ক্ষমতার রাজনীতি দ্বিধা-ত্রিধা বিভক্ত হয়ে গেল। প্রত্যেক দলই টিকে থাকার জন্য শিক্ষাঙ্গন, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামাবরণে রাজনৈতিক শক্তিচর্চার চারণভূমিতে পরিণত করতে থাকল।
ছাত্ররাজনীতির নামে একদল ছাত্রকে মাস্তান বানিয়ে ফেলল। চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ আর সন্ত্রাসীর তিলক এঁকে দিল কপালে। পাশাপাশি গ্রাস করল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের একাংশকে। প্রত্যেক অংশের সামনেই ক্ষমতাসীনরা লাভ-লোভের মূলো ঝুলাতে লাগলেন। মুক্তিযুদ্ধপূর্ব আইয়ুববিরোধী আন্দোলন ও পরবর্তী গণআন্দোলনে আদর্শিক দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছিলেন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের গাইড-ফিলোসোফার। সংকটে রাজনৈতিক নেতারা পরামর্শের জন্য ছুটে আসতেন ক্যাম্পাসে। ১৯৯০-এর পর অবস্থা এমন দাঁড়াল, নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের অনেকে নানা রাজনৈতিক দলের রং গায়ে চড়ালেন। এবার এ ধারার শিক্ষক নেতারা নিজেদের উদ্দিষ্ট অর্জনের জন্য শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীদের সুদৃষ্টি পেতে কৃপা ভিক্ষা করতে লাগলেন। ফলে মেধাবী ছাত্ররা যেমন মাস্তানতন্ত্রের ছাত্ররাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিল, তেমনি বিবেকবান পণ্ডিত শিক্ষকরা এমন অসুস্থ রাজনৈতিক ধারা থেকে সরিয়ে ফেলে নিজেদের শিক্ষা ও গবেষণায় নিবেদিত করলেন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মর্যাদা
- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়