‘টিপ পরছোস ক্যান?’
আমরা কি একটা ভয়ঙ্কর সময়ে ঢুকে পড়েছি? গত কয়েকদিনের কয়েকটি ঘটনা আমার মনে বারবার এই প্রশ্নের সৃষ্টি করছে। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই ছিল উদার, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয়।
ধর্মনিরপেক্ষতাকে অনেকে ধর্মহীনতার সাথে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা হলো, সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করার অধিকার। বাংলাদেশ তাই করছিল। বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল সেই উদারতায়। ইসলামের মূল চেতনার সাথে ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো বিরোধ নেই।
ইসলাম যার যার ধর্ম নির্বিঘ্নে পালন করার স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। কিন্তু আমাদের দেশের কিছু মানুষ সবকিছুতে ধর্মকে টেনে এনে ইসলামকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে ফেলতে চাইছেন। ইসলাম সম্পর্কে একটা ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে। কিছু উগ্র সাম্প্রদায়িক চিন্তার মানুষ ইসলামকে কঠিন করে দিচ্ছে। ইসলামের সহজ সাবলীল সৌন্দর্যকে এরা নিষেধের বেড়াজালে আটকে ফেলার চেষ্টা করছে।
এই সাম্প্রদায়িক শক্তিটি ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে মিলে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ চালিয়েছে। এসবই তারা করেছে ধর্মের নামে। এভাবেই যুগে যুগে তারা ধর্মকে ব্যবহার করেছে, ধর্মের অবমাননা করেছে।
বিজয়ের পর ধর্মের নামে অধর্ম করা সেই সাম্প্রদায়িক শক্তি গর্তে চলে যায়। কিন্তু ৭৫এর পর তারা দ্বিগুণ শক্তিতে ফিরে আসে। ধীরে ধীরে চলে আসে ক্ষমতার কাছাকাছি। বাংলাকে আফগান বানানোর আকাঙ্খা প্রকাশ্য রাজপথে উচ্চারিত হয়েছে। ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্র এবং সমাজের অনেক অসঙ্গতি দূর করেছে। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার শিকড় এত গভীরে চলে গেছে, আওয়ামী লীগ পারেনি সেই বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে। বরং ক্ষমতায় টিকে থাকতে কৌশলের আবরণে বারবার আপস করে সেই বিষবৃক্ষে আওয়ামী লীগও প্রকারান্তরে পানি ঢেলেছে।