প্রশ্নের শক্তি আর উত্তরের বিভ্রান্তি
প্রশ্নের একটা শক্তি আছে। তা উত্তরদাতাকে বিচলিত করে, হতভম্ব করে, পর্যুদস্ত করে এমনকি পরাজিত করে। তাই অতীত যুগে প্রশ্নহীন আনুগত্য চাইতেন শাসকরা। তবে ইতিহাস বলে, শাসকরা যা চান তা তো সব সময় পূরণ হয় না আর সব প্রশ্নের উত্তর দিতেও পারেন না তারা। মহাপরাক্রমশালী এক সম্রাটকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি কি সমুদ্রের ঢেউকে থামিয়ে দিতে পারবেন? উত্তরে ছিল নীরবতা আর প্রশ্নকারীর প্রতি তীব্র কটাক্ষ। যাক! সেসব কথা। এখন তো আর সেই সাম্রাজ্য নেই, সম্রাটও নেই। কিন্তু একটা বিষয় আছে। ভুল হোক শুদ্ধ হোক চট-জলদি উত্তর দেওয়ার ক্ষমতাকে সবাই পছন্দ করতেন। সে কারণে মোল্লা দো পেয়াজা, বীরবল, গোপাল ভাঁড় এমনকি নাসির উদ্দিন হোজ্জা পর্যন্ত ইতিহাসে বেঁচে আছেন তাদের বুদ্ধিদীপ্ত তাৎক্ষণিক উত্তর দেওয়ার কারণে।
ইতিহাসের সীমানা ছাড়িয়ে এ ধরনের চরিত্র আজও মেলে। এখন তো সাম্রাজ্য বা সম্রাট নেই আছে রাষ্ট্র এবং সরকার। যে সরকার যত শক্তিশালী অর্থাৎ বিরোধী মতকে যত দমন করতে পারেন তার চারপাশে এ রকমের চরিত্র বেশি পাওয়া যায়। আর একটা বিষয়ে পরিবর্তন ঘটেছে তা হলো উত্তর এখন আর বুদ্ধিদীপ্ত হতে হয় না। যুক্তি, বুদ্ধি, রসবোধের পরিবর্তে এখন প্রয়োজন গলার জোর, অসত্য তথ্য, প্রতিপক্ষকে তাচ্ছিল্য করার ক্ষমতা। প্রচারমাধ্যমে বিপুলভাবে তা প্রচার করা হয়। ম্রিয়মাণ সত্য দুর্বিনীত মিথ্যার সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারে না। ফলে বিজয়ীর আত্মতৃপ্তি নিয়ে তারা বলতে থাকেন, বলতে থাকেন, বলতেই থাকেন। জনগণ এসব বিশ্বাস করেন কি না জানা যায় না কারণ জনমত যাচাইয়ের জন্য গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নেই। তবে জনগণ নিশ্চুপ হয়ে থাকেন এটা বোঝা যায়। নীরবতাকেই সম্মতির লক্ষণ হিসেবে ধরে নিয়ে এই বিভ্রান্তিকর উত্তর প্রদান চলতেই থাকে। বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরের চেয়ে বিবেচনাহীন বক্তব্য এখন গুরুত্ব পাচ্ছে।
যেমন ধরা যাক, বলা হচ্ছে দাম বেড়েছে তাতে জনগণের খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে না, কারণ দাম যা বেড়েছে তার চেয়ে আয় বেড়েছে অনেক বেশি। বাস্তবে কি তাই? বাংলাদেশে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা লেবার ফোরস সার্ভে অনুযায়ী ৬ কোটি ৮২ লাখ। এর মধ্যে সাড়ে ৫ কোটির বেশি অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবী। যাদের মাসিক বেতন বা নিয়মিত কাজের কোনো সংস্থান নেই। এরা অনেকটা কানাবেনা অর্থাৎ কাজ নেই তো বেতন নেই। বাকি সোয়া কোটি যাদের প্রাতিষ্ঠানিক খাত বলা হয় তাদের মজুরি নির্ধারণ করার জন্য মজুরি বোর্ড আছে। মজুরি বোর্ড ৪৩টা সেক্টরের মজুরি নির্ধারণ করে দেয়। সেটা ন্যায্য হয় কি না সে প্রশ্ন এখন যদি আলোচনা নাও করি, উত্তরদাতারা কি বলবেন গত ২০১৮ সালের পর কতটি সেক্টরে মজুরি পুনর্নির্ধারণ হয়েছে? ২০১৩ সালের পর থেকে ৩২টি খাতের মজুরি পুনর্নির্ধারণ হয়নি। এ যাবৎকালে দ্রব্যমূল্য কি বাড়েনি?
- ট্যাগ:
- মতামত
- প্রশ্নোত্তর
- বিভ্রান্তি