দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের তিন মাস পরও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য বন্ধ থাকাটা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। বুধবার সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনশক্তি ব্যবসায়ীদের খুবই ক্ষুদ্র তবে প্রভাবশালী একটা অংশ বায়না ধরেছে, দেশটিতে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগটা দিতে হবে শুধু মালয়েশিয়া সরকারের 'পছন্দের' বাংলাদেশি এজেন্সিগুলোকে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তাদের এ বায়না যদি মান্যতা পায় তাহলে শুধু ২৫টি এজেন্সি মালয়েশিয়াতে শ্রমিক পাঠাতে পারবে। এর ফলে একদিকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে, আরেকদিকে এ খাতের ব্যবসায় সৃষ্টি হতে পারে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি।
কারণ, ইতোমধ্যে অভিযোগ উঠেছে, ওই 'সৌভাগ্যবান' ২৫ এজেন্সির তালিকায় নাম ওঠাতে ৫ কোটি টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া এ ২৫ এজেন্সির সাব-এজেন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য ১০টি করে আরও ২৫০ এজেন্সিকে বাছাই করা হচ্ছে, যাদের কাছ থেকেও একটা মোটা অঙ্কের ফি নেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, ২৫০ এজেন্সিকে মূল ২৫ এজেন্সির মাধ্যমে লোক পাঠানোর সময়ও শেষোক্তদের তাদের চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিক পিছু ফি দিতে হবে।
২০১৫ সালে একই পদ্ধতিতে, যাকে 'জিটুজি প্লাস' বলা হচ্ছে- মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে মাত্র ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে পৌনে তিন লাখ কর্মী পাঠানো হয়েছিল। তখন প্রথমে ৩৭ হাজার টাকা এবং পরে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা অভিবাসন খরচ ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত কর্মীপ্রতি নেওয়া হয় সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা। এতে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালে ক্ষমতায় ফিরে মাহাথির সরকার বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়াই বন্ধ করে দেয়। এরপর বাংলাদেশ সরকার বহু দেনদরবার চালিয়ে ওই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, বাংলাদেশি
এ সিন্ডিকেট ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া সরকারকে 'ম্যানেজ' করে ফেলেছে, যার ধারাবাহিকতায়, সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যেমনটা অভিযোগ তুলেছে, মালয়েশিয়া সরকারও ওই সিন্ডেকেটের বায়না মেনে নিতে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিচ্ছে। এমনকি বিষয়টি ফয়সালার জন্য গত ১৭ জানুয়ারি দেওয়া দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক ডাকার বাংলাদেশি প্রস্তাবেও তারা সাড়া দিচ্ছে না। এ অবস্থায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য খুলতে আরও দেরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, প্রায় একই ধরনের অভিযোগে এ শ্রমবাজারটি বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ হয় ২০০৯ সালে। অনেক তদবিরের পর ২০১২ সালে শুধু সরকারিভাবে(জিটুজি পদ্ধতিতে) শ্রমিক নিতে রাজি হয় মালয়েশিয়া। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের অদক্ষতার কারণে সেটি সফল হয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করে জিটুজি প্লাস পদ্ধতি চালু করা হয়, যা আবার ব্যাপক দুর্নীতি ও শ্রমিক হয়রানির কারণে অচিরেই বন্ধ হয়ে যায়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জনশক্তি রফতানি