‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি’
চোখ বন্ধ করে মায়ের মুখটা যখন ভাবি, তখন আরও কতশত ভাবনা, স্মৃতি, চিন্তা মানসপটে ভেসে ওঠে। আশ্চর্যজনকভাবে, মায়ের মুখখানি তখন কেবলমাত্র মায়ের মুখ আর থাকে না, হয়ে ওঠে আমার ফেলে আসা দিন, আমার বড় হয়ে ওঠা, বাবা-মা-ভাই-বোন-বন্ধুবান্ধব-আত্মীয় পরিজন দিয়ে ঘিরে থাকা আমার জীবনের গল্পের চিত্রপট। আমার মননে আর মানসে চিরচলমান এই চিত্রপটের সমস্তটায় আমি অনুভব করি আমার ফেলে আসা জন্মভূমিকে। তাই আমার এই যাপিত জীবনের গল্পের ভেতরকার গল্পে কখন যে আমার জন্মদাত্রী মা আর আমার ফেলে আসা জন্মভূমির মুখটা একাকার হয়ে গেছে, নিজেই হয়তো টের পাইনি।
যতবার ‘আঁখি মেলে তোমার আলো প্রথম আমার চোখ জুড়ালো’ লাইনখানি গাই, ততবার বাংলা নামের দেশখানি আর সেই দেশে থাকা আমার মায়ের মুখখানি একাত্ম, একার্থ হয়ে যায় আমার মনে, আমার মানসে। এই পরিণত বয়সে এসে যখন ফিরে তাকাই, তখন দেখি আমার ভাবনায়, চিন্তায়, চেতনে যে বাংলাদেশ, যে বাঙালিয়ানা, যে দেশপ্রেম, যে স্বদেশবোধ তার উৎসমুখে দাঁড়িয়ে আছেন আমার জন্মদাতা মা-বাবা। বড় হতে হতে ধীরে ধীরে যেমন তাঁদের আরও বেশি করে ভালোবাসতে শিখেছি, তাঁদের জানতে চেয়েছি, বুঝতে চেষ্টা করেছি; ঠিক তেমনি তাঁদের মানস আর মননের উদ্দীপনাতেই আমার জন্মভূমি বাংলাদেশকে, বাঙালিকে, বাংলা ভাষাকে, আমাদের বাঙালিয়ানার বোধকে, আমাদের ইতিহাস– সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে দেখবার, চেনবার, জানবার প্রয়াসে সামিল হতে শিখেছি।