এফএওর আঞ্চলিক সম্মেলন ও বাংলাদেশের কৃষি
ঢাকায় অনুষ্ঠিত এফএওর চার দিনব্যাপী এশিয়া প্যাসিফিক আঞ্চলিক সম্মেলনে এ অঞ্চলের কৃষির সমকালীন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষি গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য একটি বিশেষ আঞ্চলিক তহবিল গঠনের যে প্রস্তাবটি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের উদ্বোধনী সভায় রেখেছিলেন, তা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ অঞ্চলে কৃষির উন্নয়নে বিশেষ ডিজিটাল হাব স্থাপন, সবুজায়ন বৃদ্ধি, জলবায়ু সহনশীল কৃষি, টেকসই কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব ও পরস্পর নির্ভরশীল হিসেবে বিবেচনা করে ‘ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রচ’কে অগ্রাধিকার দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন সম্মেলনের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশে এই প্রথম এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য এফএওর মহাপরিচালক চি দোংউ বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি চীনের সাবেক কৃষিমন্ত্রী এবং একজন বাস্তববাদী নেতা। তিনি দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করেন যে টেকসই লক্ষ্যগুলো পূরণে পৃথিবী অনেকটাই পিছিয়ে আছে। সে জন্যই বিশ্ব খাদ্যব্যবস্থাকে আরো সহিষ্ণু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। একই সঙ্গে তিনি মনে করেন যে কৃষি একটি সমন্বিত বিষয়। সে জন্য অর্থ, পরিকল্পনা, বাণিজ্য, খাদ্য, জলবায়ু ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কৃষি মন্ত্রণালয়কে কাজ করতে হয়। প্রযুক্তির কল্যাণে কৃষি দ্রুতই বদলে যাচ্ছে। তাই বর্তমানের কৃষিকে প্রযুক্তির চোখ দিয়ে দেখতে হবে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি তিনি আমাদের কৃষিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকও করেন। ৯ মার্চ ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে মহাপরিচালকের সঙ্গে এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় কৃষিমন্ত্রীর আমন্ত্রণে অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন, ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ এবং আমি উপস্থিত ছিলাম। খাদ্যমন্ত্রী, প্রাণিসম্পদমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং এফএওর প্রধান অর্থনীতিবিদ ও মহাপরিচালকের বিশেষ উপদেষ্টাও উপস্থিত ছিলেন। এরপর আমরা মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করি এবং মহাপরিচালকের সঙ্গে বাংলাদেশের কৃষির অসামান্য উন্নয়ন ও বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে খোলামেলা আলাপ হয়।
আমরা অর্থনীতিবিদ হিসেবে বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তরের পেছনে সরকারের ধারাবাহিক বিনিয়োগ, কৃষিবিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন ও গবেষণা, সম্প্রসারণকর্মীদের মাঠ পর্যায়ের ভূমিকা এবং ব্যক্তি খাতের অবদান নিয়ে আলাপ করি। সরকারের পাশাপাশি উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় ব্যাংক উপযুক্ত কৃষিঋণ নীতিমালা প্রণয়ন, সবুজ কৃষির জন্য বিশেষ তহবিল গঠন, নারী উদ্যোক্তাসহ সবুজ উদ্যোক্তাদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টির কথা বলি। ব্যক্তি খাতও বাংলাদেশের কৃষিকে যেভাবে খোরপোশ কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরে বিরাট ভূমিকা পালন করছে, সেসব বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে। একই সঙ্গে করোনাকালে সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ার কারণে যেভাবে কৃষি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল এবং বাংলাদেশ সরকার দ্রুত প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেই কথাগুলোও আমরা তুলে ধরি। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের কৃষিবিজ্ঞানীরা যে উদ্ভাবন ও মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করার মনোভাব দেখিয়েছেন, সেসব কথাও উঠে আসে আমাদের আলাপচারিতায়। কৃষিপণ্যের সংরক্ষণ, সোলার ইরিগেশন পাম্পের প্রসার এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে কৃষির সম্প্রসারণের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও কথা হয়।